



কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে, ফলে তারা বাড়িতে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। এটি বিশেষত দুর্বল সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সত্য। অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের বিশ্লেষণ জানা যায় যে, কোভিড-১৯ এর লকডাউনের সময়ে অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিও প্লাটফর্ম থেকে ডাউনলোড করা যায় এমন ভিডিওগুলোর মধ্যে ‘বস্তার ঢিবিতে সবজি ফলানো’ এর মতো কৃষক-প্রশিক্ষণ প্রচারণাগুলো জনপ্রিয়তা পায়।
“আমরা যদি কেবল আমাদের বাড়ির চারপাশের আঙিনায় ফল আর শাকসবজি ফলাতে পারি তাহলে এটি লাইবেরিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য সরবরাহের বাধাগুলো পার হতে সহযোগিতা করতে পরি।“ বলেন ‘অ্যাগ্রো টেক লাইবেরিয়া’র নির্বাহী পরিচালক এবং অ্যাকসেস এগ্রিকালচার অ্যাম্বাসেডর জোনাথন স্টুয়ার্ট। তিনি আরও বলেন, সংকটের দিনগুলোতে খাদ্য সরবরাহে অবদান রাখতে স্টেকহোল্ডারেরা অবশ্যই শহর ও উপ-শহরে অবশ্যই কৃষির প্রচারণা চালাবেন।
‘অ্যাগ্রো টেক লাইবেরিয়া’ হলো একটি যুব-কেন্দ্রিক সংস্থা যারা সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব পালনে উৎসাহ জোগায়। এটি জলবায়ুর ভালো চর্চাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায় এবং লাইবেরিয়ার যুবকদের জন্য চাষাবাদ, উদ্যোক্তা, কৃষিব্যবসা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব বিষয়ে পরামর্শদাতা [মেন্টরিং] এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে।
বাড়ির উঠানে চাষাবাদের উপকারিতা
আজকাল মানুষজনকে অহরহ যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, সেইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাড়ির উঠানে চাষাবাদ অল্প খরচের বাস্তবসম্মত একটি সমাধান। এটি স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ায় এবং খাদ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখে। এটি পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বজায় রাখে। তার ওপর এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং সহজে পাওয়া যায়।
বাড়ির উঠানে চাষাবাদ শহরের লোকেদের প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকতে সাহায্য করে এবং দৈনন্দিন জীবনের চাপ মুক্ত হয়ে সুস্থ থাকতে সহযোগিতা করে। যেহেতু পরিবারগুলো নিজেদের বাড়ির উঠানে ফল এবং শাকসবজি ফলাতে শিখছে, ফলে তারা কীটনাশক মুক্ত তাজা স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেÑ যা তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
ঝুঁকিতে আছে এমন জনগোষ্ঠীর জন্য উঠানে চাষাবাদ কেবল খাদ্যের সরবরাহই নিশ্চিতই করে না, বরং তারা এর থেকে অতিরিক্ত আয়ও করতে পারে। কোভিড-১৯ সংকটের সময়ে এটি নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার একটি উপযুক্ত মাধ্যম বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাড়িতে শাকসবজি উৎপাদন করে একদিকে তারা যেমন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে খরচ বাঁচাতে পারে তেমনি উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করতে পারে।
স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদনে যুবসমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা
বাড়ির উঠানে চাষাবাদের একাধিক উপকারিতা রয়েছে, জোনাথনের নেতৃত্বাধীন অ্যাগ্রো টেক ‘আসুন আমাদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করি’ [লেটস্ গ্রো আওয়ার ফুড] শিরোনামে একটি প্রচারাভিযান পরিচালনা করে, যাতে প্রচার করা হয় উঠানে চাষাবাদ কোভিড-১৯ সংকটের সময়ে এবং এর পরেও লাইবেরিয়ানদের খাদ্য ও শাকসবজির সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে পরিবারগুলোকে শাকসবজির বীজ উৎপাদন এবং কৃষি-বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া হয়। যুবকদের জন্য মাটি ব্যবস্থাপনা, রোপণ-সামগ্রী নির্বাচন এবং টেকসই কৃষিচর্চাগুলো এবং অ্যাকসেস এগ্রিকালচার www.accessagriculture.org/bgl এর অংশীদারদের দ্বারা নির্মিত প্রাসঙ্গিক কৃষক-প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলোর ওপর অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
জোনাথন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জনগোষ্ঠীগুলো, বিশেষত যুবক ও নারীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা এবং শেষ পর্যন্ত পুরো দেশের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদনে সহযোগিতাসমূহ-কে উৎসাহিত করা।’ তিনি আরও বলেন ‘এটা দেখে আমরা খুবই আনন্দিত যে, আমাদের প্রচেষ্টার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে. এবং আমাদের এই যুক্ততা ও আলোচনা কোভিড-১৯ পরবর্তীসময়েও চালিয়ে যাবার বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
চাষাবাদ ও জলবায়ু সম্পর্কিত যেকোনো ইস্যুতে যুবকদের সক্রিয়ভাবে জড়িত করার এক দারুণ অনুরাগী অ্যাডভোকেট জোনাথন মনে করেন, নিজের বাড়িতে কীভাবে খাদ্য উৎপাদন করা যায় সেই জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে তরুণদের স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে এই সংকটকালে এবং সংকট কেটে যাওয়ার পরও যদি কখনো খাদ্য সরবরাহে ব্যাঘত ঘটে তাহলে তখনো খাদ্য নিরাপত্তা অব্যাহত রাখা সম্ভব।
দ্রষ্টব্য: এই ব্লগ পোস্টটি #WorldSoilDay তে উত্সর্গীকৃত যা প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর সারা বিশ্বে পালন করা হয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য মাটি মৌলিক। শুভ বিশ্ব মাটি দিবস!