



পরিবেশের অবনতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ব এখন জেগে উঠেছে, অনেক দেশ বুঝতে পেরেছে যে, রাসায়নিক সার আর কীটনাশক পুরাতন প্রযুক্তি। যখন জৈব ও ইকোলজিক্যাল কৃষকেরা কীটপতঙ্গ এবং রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে এবং স্থানীয় ইনপুটগুলোর সাহায্যে মাটির উর্বরতা বাড়াতে তাদের উদ্ভাবনী দক্ষতা ব্যবহার করছে, এখন বাণিজ্যিক খাতও প্রাকৃতিক পণ্য বিক্রির বিপুল সম্ভাবনা দেখছে।
কোচাবাম্বায় অবস্থিত বলিভিয়ান গবেষণা সংস্থা ‘প্রোইনপা’-এর বাণিজ্যিক শাখা ‘বায়ো টপ’-এ এঞ্জেনিয়ার জিমি সিয়ানকাস আমাদের স্বাগত জানান। জেফ, আনা, মারসেলা ও আমি ‘বায়ো টপ’ প্ল্যান্টের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত সেটআপ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তারা সেখানে বিস্তৃত পরিসরে প্রচুর পরিমাণে জৈব ইনপুট উৎপাদন করছে, যেমন, বায়োটিকস। ‘বায়ো টপ’ জৈব ইনপুট নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করছে, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের আগে কৃষকদের ক্ষেতে সেগুলো পরীক্ষা করছে।
গবেষণাগারে স্থানীয় মাটির নমুনা বিশ্লেষণ করার পর সবচেয়ে কার্যকর অণুজীবগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়, এরপর সেগুলো বহুগুণ করা হয়। উপকারী ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট ছাড়াও ‘বায়ো টপ’ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক উৎপন্ন করে, যা পোকামাকড় ও ক্ষতিকারক ছত্রাক মেরে ফেলতে পারে। তাদের চারটি বায়োরিয়েক্টরসের প্রতিটিতে তারা প্রতি তিন দিনে একবার ১২০ লিটার অতি ঘন অণুজীবকে বহুগুণ করতে সক্ষম। যেখানে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করতে মাত্র ১০০ মিলিলিটার প্রয়োজন হয়, সেখানে তারা তাদের বর্তমান সেটআপনের মাধ্যমে চার লক্ষ হেক্টর জমিতে জৈব ইনপুট সরবরাহ করছে।
বিশ্বব্যাপী জৈব-চাষকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বহুজাতিক করপোরেশন থেকে কিছুটা স্বাধীনতা বজায়ে রেখে বলিভিয়ার মতো একটি দেশ তার নিজস্ব জৈব ইনপুট তৈরি করছে এটি দেখেও ভালো লাগছে।
যখন আমরা জিমি সিয়ানকাসকে বলি যে, আমরা বায়োল, গাঁজানো তরল সার নিয়ে একটি কৃষক প্রশিক্ষণ ভিডিও তৈরি করছি, এবং আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করি যে, ‘প্রোইনপা’ এটি তৈরি করে কি না। তিনি জানান, “এটি এমন কয়েকটি পণ্যের মধ্যে একটি যা আমরা উৎপাদন করি না। কেননা, বায়োল তৈরি করে কোনো লাভ হয় না। অধিকন্তু এতে অনেক বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও আমাদের বাণিজ্যিক জৈব ইনপুটগুলোর জাতীয় প্রশংসাপত্র সংস্থা এসইএনএএসএজি-এর প্রত্যয়ন প্রয়োজন, তাই আমাদের উচ্চমানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা দরকার। যদি পণ্যের গায়ে সাঁটানো লেবেলে বলা থাকে যে, এতে একটি নির্দিষ্ট ঘনত্বে একধরনের অণুজীব রয়েছে, তাহলে তার বর্ণনাও থাকা দরকার।”
আমি বুঝতে পারি যে, এই বিধানগুলো পণ্যের মান বজায়ে রাখার উদ্দেশ্যে করা, কিন্তু তারা আরও জটিল মিশ্রণ তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি কোম্পানির ক্ষমতাকে সীমিত করে। একচামচ মাটিতে হাজার হাজার প্রজাতির অণুজীব থাকে। তাই শুধু একটি প্রজাতির মধ্যে একটি প্রস্তুতি সীমিত রাখলে তা একটি জটিল জীবন্ত মৃত্তিকা দলের বৈচিত্র্য বাড়াতে অতি সামান্যই অবদান রাখতে পারে।
আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলাম যে, বায়োল মাটির প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বা মাটির উর্বরতা বাড়াতে কার্যকর হতে পারে ; তাই আমি জিমি সিয়ানকাসকের কাছ থেকে জানতে চাই যে, বায়োল কৃষকদের জন্য একটি দরকারি প্রযুক্তি কি না ? তিনি বলেন, “হ্যাঁ অবশ্যই। এটি বিভিন্ন ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া, ছাত্রাক, ইস্ট-সহ মাটির অণুজীবের জটিল দলগুলোকে সমৃদ্ধ করে।” যেহেতু কৃষকেরা তাদের পশুর তাজা সারের সাথে উদ্ভিদের হরমোন সমৃদ্ধ শিম মেশায় তাই একজন কৃষকের তৈরি বায়োলে থাকা অণুজীব অন্য কৃষকের তৈরি বায়োল থেকে আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক।
আমি একজন বিশেষজ্ঞের কথা শুনে আনন্দিত হয়েছি যে, তিনি একটি হালকা-কারিগরি-নির্ভর প্রযুক্তি বায়োলের উপযোগিতা সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। আমরা বায়োলের ওপর যে প্রশিক্ষণ ভিডিওটি তৈরি করছি, কৃষকেরা নিশ্চয়ই এর প্রশংসা করবেন, যারা তাদের সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে চান।
কারখানা পরিদর্শন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বিভিন্ন স্কেলে বায়োইনপুট লাভজনকভাবে তৈরি করা যেতে পারে। একটি আধুনিক কোম্পানি অত্যাধুনিক একটি প্ল্যান্টে নির্দিষ্ট উপকারী অণুজীবগুলোকে শোধন করতে পারে এবং সুবিধাজনক বোতলে ভরে কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে পারে। এর মধ্যে কৃষকেরা অনেক অণুজীব দিয়ে তাদের নিজস্ব ইনপুট তৈরি করতে পারে, যা কীটপতঙ্গের সাথে লড়াই করবে এবং মাটি উন্নত করবে। উপকারী অণুজীব তৈরির বাণিজ্যিক এবং ঘরোয়া উভয় পদ্ধতিই আমদানিকৃত কৃষি-রাসায়নিক থেকে চাষাবাদকে দূরে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
Related Access Agriculture videos
তরল এবং দানাদারঅর্গানিক বায়োসার
মাটি ও গাছপালারজন্য ভালো জীবাণু
ভারমিওয়াশ : শস্যের এক জৈব টনিক