কৃষিবিজ্ঞানীগণ দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার পর এই মীমাংসায় পৌঁছেছেনে যে, প্রতিবার রোপণের সময় কিছুসংখ্যক বীজ ক্রমাগত ক্ষয় হতে থাকে। এটি বিশেষভাবে সে সমস্ত ফসলের ক্ষেত্রে ঘটে, যেগুলো কেটে বা কন্দ আকারে রোপণ করা হয়। যেমন, আলু। বীজ ক্ষয় হলে কীটপতঙ্গ এবং রোগবালাইয়ে আক্রমণ করে, যা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের বীজে প্রবাহিত হয় এবং ধীরে ধীরে ফলন কমিয়ে ফেলে।
ইকুয়েডরিয়ান গাছপালা বিজ্ঞানী ইসরায়েল নাবারেতে এটি নিশ্চিত করেছিলেন। তবে, তিনি শুধু গবেষণা করেছিলেন, কৃষকদের মাঠে যাননি। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল উচ্চ আন্দেজের বিভিন্ন উচ্চতার নানা জায়গা। সেসব স্থানে তিনি দেখেছেন সনদধারী (স্বাস্থ্যকর) আলু বীজ তিন বছর ধরে প্রতিবছর আরও বেশি পরিমাণে ভাইরাস ও অন্যান্য রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়।
যাই হোক, নাবারেতে ইকুয়েডরিয়ার কৃষিখামারগুলোতে বীজের ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণ পাননি। কৃষকেরা কীভাবে আলু উৎপাদন করে সে তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি ২৬০টি কৃষক পরিবারে জরিপ করেন। প্রতীকী জরিপ সেখানেই থেমে যায়। তবে, নাবারেতে প্রতিটি পরিবার থেকে আলু-বীজের নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে তিনি সংগৃহীত আলু-বীজেগুলো নিয়ে গবেষণাগারে পোকামাকড় ও রোগবালাই নির্ণয় করেন।
প্রচলিত জ্ঞানের বিপরীতে নাবারেতে দেখেন যে, কৃষকদের বীজ ক্ষয় হচ্ছে না। একই খামারে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চাষ করা আলু-বীজ সাম্প্রতিক সময়েও রোপণের জন্য সুস্থ ছিল। নাবারেতে এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন যে, বীজ সুস্থ রাখার জন্য কৃষকেরা নিজস্ব কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যেমন, ইকুয়েডরের কৃষকেরা প্রায়শই বীজ নির্বাচন করার সময় কন্দের স্ত‚পের মধ্য থেকে সেরাগুলো বাছাই করে নেন। তারা বীজ অঙ্কুরিত না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করেন। এতে বীজের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে বলে মনে হয়। অন্য কৃষকেরা ব্যাগে বীজ সংরক্ষণ করেন অথবা সার প্রয়োগ করেন। তাঁর জরিপ থেকে ৩৬টি স্থানীয়চর্চা সনাক্ত করা হয়েছিল, যেগুলো বীজের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
কৃষকেরা নিজেরাই জানতেন না যে, তাঁরা সঠিক কাজটি করেন। মাত্র ১৬ শতাংশ কৃষক বলেছিলেন যে, বীজের ক্ষয় তাদের জন্য একটি সমস্যা ; তবে, তারা এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। যখন বীজের ক্ষয় হয় তখন ইকুয়েডরের কৃষকেরা বলেন যে, এটি ‘দুর্বল’ (টায়ার্ড) হয়ে গেছে। তখন তারা নতুন বীজ রোপণ করেন।
এটা ঠিক যে, সকল স্থানীয় চর্চা বা অভ্যাস স্বাস্থ্যকর বীজ তৈরি করে না। যখন আলুর দাম বেড়ে যায় তখন কৃষকেরা যত বেশি সম্ভব আলু বিক্রি করতে প্রলুব্ধ হন, এমন কি যেগুলো ভালো বীজ হতে পারে সেগুলোও বিক্রি করে দিতে চান।
নাবারেতে অন্যান্য কৃষিবিজ্ঞানী-কে কৃষকদের কাছ থেকে বীজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে উৎসাহিত করেন। যাতে পরে বিজ্ঞানীগণ খামার পরিবারগুলোকে সহায়ক নতুন ধারণাগুলো সুপারিশ করতে পারেন। নাবারেতে এবং তাঁর সহকর্মীগণ কিছু সুপারিশ করেছেন। যেমন, কৃষকেরা ছোটো কিন্তু বিশেষ ক্ষেতে বেশি পরিমাণে বীজ ফলাতে পারেন, যেখানে স্বাস্থ্যকর গাছগুলোকে পরবর্তী বছরগুলোর জন্য মা বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারেন।
এই গবেষণাটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এটি একসময় বদলে যায় ; কেননা, চাষাবাদের বাস্তব জগৎ এলোমেলো। গবেষণাগারে যতেœ নিয়ন্ত্রিত অনুসন্ধানে দেখা যায়, বীজের ক্ষয় হয়, কিন্তু কৃষকের ক্ষেতে অতটা নয়, কেননা, কৃষক এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কীভাবে বীজের ক্ষয় হয় তা দেখাতে গবেষকগণ উৎসাহী থাকেন, যেখানে কৃষকেরা এটি এড়িয়ে চলতে কাজ করেন।
আরও পড়ার জন্য
Navarrete, Israel 2021 Seed Degeneration of Potato in the Tropical Highlands of Ecuador. Ph.D. thesis. Wageningen University, The Netherlands. 234 pp.
এক্সেস এগ্রিকালচার থেকে সম্পর্কিত ভিডিও
আলু সংরক্ষণে কাঠের গুঁড়ার ব্যবহার
© Copyright Agro-Insight