মানবতা একটি ভীতিকর নতুন বিশে^র প্রান্তে উপনীত, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর কাজ করছে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি সংক্রমিত ঘা, মরিচা ধরা একটি পেরেকের আচড় থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। অস্ত্রপচার অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। যক্ষ্মার মতো সাধারণ রোগ আরও একবার লাখ লাখ মানুষের জীবন-কে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
সমস্যা হলো, অ্যান্টিবায়োটিক রোগ সৃষ্টিকারী কিছু ব্যাকটেরিয়াকে বাধা দিতে পারছে না। যত বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যত দ্রুত এই বাধাদানকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তত দ্রুত তারা সংখ্যা বাড়িয়ে ফেলছে। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পরামর্শ এবং নির্বিচারে এর ব্যবহার বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ, এবং সেটি মানুষ ও প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান।
নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির গবেষণা ব্যয়বহুল এবং ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও এটিকে আর লাভজনক বলে মনে করছে না। যাই হোক, অচিরেই অনুসরণ করার মতো কিছু সুপারিশও রয়েছে :
- মানুষ কিংবা গবাদিপশুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন না অথবা দেওয়ার পরামর্শ দেবেন না, যদি না তাদের সত্যিকার অর্থেই এর প্রয়োজন হয়।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ না থাকলে গবাদিপশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন না। এবং কখনও নিয়মিতভাবে পশু-খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক মেশাবেন না। (তরুণ প্রাণীদের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য সাধারণত এটি করা হয়ে থাকে)
- দুগ্ধবতী গাভীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেবার পাঁচ থেকে সাত দিন পর তার দুধ ব্যবহার করুন। ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, দুধে আর কোনো ওষুধ নেই।
তাই, সম্প্রতি আমাকে যখন কোচাবাম্বার কাছে একটি সমবায় দুগ্ধ-খামার পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তখন আমি আনন্দের সাথে দুধ কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত রাখতে হয় সে বিষয়ে তাদের একটি ভিডিও দেখাতে গিয়েছিলাম।
ভিডিওটি নাইজেরিয়াতে ধারণ করা হয়েছিল, এতে কৃষকেরা কিছু মনে করেন নি, কিন্তু যখন আমি বললাম, এটি ইংরেজি ভাষার ভিডিও তখন দর্শকদের মাঝ থেকে হতাশাপূর্ণ আর্তনাদ শোনা গেল। আমি স্প্যানিশ ভাষায় উচ্চস্বরে অনুবাদ করে সমাধান করলাম।
দর্শকের কাছ থেকে আসা প্রশ্নগুলো আপনাকে অনেক কিছু বলে দেয় যে, একটি ভিডিও অথবা বক্তৃতার বিষয় তারা কীভাবে বুঝেছে। এবং এ ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণরূপে বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। একজন তরুণ, যে তার বাবা-মায়ের সাথে গবাদিপশু পালনের কাজ করেন, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ম্যাস্টাইটিস (গবাদিপশুর ওলানে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ) কি ভেষজ চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা যায় ? তিনি অ্যান্টিবায়োটিক এড়ানোর বার্তাটি বুঝতে পেরেছিলেন। তবে, ভিডিওতে স্পষ্টভাবে ম্যাস্টাইটিস সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়নি, যা দুগ্ধবতী গাভীর অতিসাধারণ একটি রোগ এবং নিয়মিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকৎসা করা হয়।
বন্ধুস্থানীয় সম্প্রসারণবিদ বলেছিলেন, ভিডিওটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কৃষকেরা কোনো দুধই ফেলতে নারাজ। যখন দুধের খামার তাদের দুধ ফিরিয়ে দেয় তখন কৃষকেরা সেগুলি দিয়ে প্রায়শই সতেজ পনির তৈরি করে এবং স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে।
বলিভিয়ার কৃষকেরা নাইজেরিয়াতে ধারণ করা দুধ বিষয়ক এই ভিডিওটি পছন্দ করেছিল। বলিভিয়ায় পরিস্থিতি সামান্য ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, কৃষকেরা তাদের নিজেদের গাভীর দুধ নিজেরাই খামারে নিয়ে আসে, ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল যে, ফুলানি (জাতিবিশেষ) গবাদিপশু পালকেরা মোটরবাইকে করে তরুণদের মাধ্যমে খামারে দুধ পাঠাচ্ছে। তবে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ সম্প্রসারণ সীমিত করার মৌলিক সুপারিশগুলো সারাবিশ্বে একই রকম। ভিডিওগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে।
অ্যকসেস এগ্রিকালচরের এই সম্পর্কিত অন্যান্য ভিডিও
দুধকে অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত রাখা
সংগ্রহ কেন্দ্রে দুধ নিয়ে যাওয়া
দুধ দেওয়া গাভীর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
দুধ দেওয়া গাভীর জন্য সুষম খাদ্য
গবাদিপশু পালনে ভালো অণুজীবের ব্যবহার
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার এই ব্লগটি পয়লা জুন বিশ্ব দুগ্ধদিবস উপলক্ষে উৎসর্গ করেছে