


কৃষকদের প্রতিদিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ছোটো ছোটো খামার মালিকেরা প্রায়শই জিজ্ঞাসা করার মতো লোক খুঁজে পান না। কখন কোন ফসলের চাষ করতে হবে অথবা বীজ বপণের উপযুক্ত সময় কোনটি তা তাদের কেউ বলে দেয় না। বলিভিয়ার আল্টোপ্লানোতে বসবাসকারী ইয়াপুচিচি জাতি জৈবচাষে অভিজ্ঞ, তারা প্রতিদিনের আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সূচক এবং আবাদ করা ফসলের ওপর তাদের দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণ রেকর্ড করতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ বিগত দশ বছর ধরে কাজটি করছেন।
এরকম কঠোর পরিবেশে আবহাওয়ার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী কিছু ফসল কাটা অথবা না কাটার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
বরাবরের মতোই আমরা সৌভাগ্যবান যে, কৃষক প্রশিক্ষণ ভিডিও তৈরি করার সময় সে-সকল কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করা গেছে, যারা নিজে থেকে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চেয়েছেন। বলিভিয়ার দক্ষিণ আল্টোপ্লানোর অধিবাসী ইয়াপুচিচিদের একজন ডন বারনেব ব্যাখ্যা করে বলেন যে, যদি তুষারপাত আপনার কুইনোয়া-কে আঘাত করে তাহলে আপনি একদিন পরে ফসল তুললে ফসল হারাতে পারেন। এর ফলে ফসলের জন্য আপনি যত কিছু করেছন সবটাই বৃথা যাবে।
তিনি আমাদের ব্রাশ ভূমিতে পথপ্রদর্শন করেন এবং স্থানীয় আইমারা ভাষায় তারা তি’উলা নামে একটি ঝোপ দেখান। তিনি বলেন, “এই গাছগুলো ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না, তাই আপনি যেখানে এই গাছ অনেক পরিমাণে দেখবেন, সেই স্থান খামার তৈরির জন্য উপযুক্ত বলে মনে করবেন এবং সেখানে আপনি খোয়াড়ে লামা (মাংস উৎপাদনের জন্য গৃহপালিত প্রাণীবিশেষ) পালন করতে পারেন এবং শস্য উৎপাদন করতে পারেন।”
তবে, আপনার খামারটি ভালোভাবে স্থাপিত হলেও তুষারপাত আঘাত হানতে পারে। অতএব, ডন বারনেব-কে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারে তাকে জানানোর জন্য আরও অনেক প্রাকৃতিক সূচক রয়েছে। তিনি বলেন, “গিরগিটি বা গুঁইসাপ (লিজার্ড) যদি নতুন ঘর তৈরি করে তাহলে বুঝতে হবে আগামীকাল বৃষ্টি হবে, কিন্তু এটি যদি তার বসবাসের গর্ত বন্ধ করতে শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে রাতে ঠান্ডায় ফসল জমে যাবে। তখন আমি তি’উলা গাছ সংগ্রহ করি এবং আমার কুইনোয়া ক্ষেতে রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত এগুলো জ¦ালাতে থাকি, ফলে ঠান্ডা আর আমার ফসলের ওপর জেঁকে বসতে পারে না।”
গাছপালা ও পশুপাখি ছাড়াও ডন বারনেব বাতাস ও মেঘ পর্যবেক্ষণ করেন। আশ্চর্যজনকভাবে, জুন ও জুলাই মাসে প্রবাহিত বাতাস তাকে বলে দেয় যে, পরবর্তী জানুয়ারি মাসে শুরু হতে যাওয়া বর্ষাকাল কেমন যাবে। বালির বড়ো একটি টিলায় পৌঁছে তিনি টিলার পাশের উল্লম্ব শৈলশিরার প্যাটার্নের দিকে নির্দেশ করেন। তিনি জানান, “যদি রেখাগুলো ১০ সেন্টিমিটার দূরে থাকে তবে বৃষ্টি একে অন্যের কাছাকাছি আসবে এবং আমাদের ফলন ভালো হবে। তবে যদি রেখাগুলো ১০ সেন্টিমিটারের বেশি দূরে থাকে তবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হবে এবং তাতে আমাদের ফসলের ক্ষতি হবে।”
ডন বারনেব এই প্রাকৃতিক সূচকগুলো সম্পর্কে একটি বই লিখছেন। তিনি আমাদের আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখান, রঙিন ছবিসমৃদ্ধ তার বইটি তিনি বহন করছিলেন, যেটিতে তার জানা সমস্ত প্রাকৃতিক সূচকগুলো ব্যাখ্যাসহকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রকৃতি পাঠ এমন একটি দক্ষতা, এটি অর্জনের জন্য ঘরের বাইরে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়, প্রাকৃতিক ঘটনারাজি পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
পরের কয়েক দিন আমরা আরও কয়েক জন অসাধারণ ইয়াপুচিরি’র সাথে দেখা করি, তারা প্রত্যেকে ক্যামেরার সামনে নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এর অংশ হওয়া সত্যিই উত্তেজনাপূর্ণ। পাশ্চাত্যে কৃষিশিল্প প্রকৃতি থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তা আমাদের চোখ খুলে দেয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে স্থানীয় জ্ঞান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি ডন বারনেবের আরও একটি উক্তি উদ্ধৃত করে এই রচনাটি শেষ করতে চাই- “এই গাছপালা ও প্রাণীকুল মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। তারা জানে এই ভূমিতে কীকরে বাঁচতে হবে এবং তারা এটি পুরোপুরি ও নিখুঁতভাবে জানে। আর তাই এই জ্ঞান হারানো উচিত নয়, এবং তরুণদের এত সমৃদ্ধ এই জ্ঞানের অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া উচিত।
এক্সেস এগ্রিকালচার থেকে সম্পর্কিত ভিডিও
© Copyright Agro-Insight