আমি যখন স্নাতক স্কুলের ছাত্র ছিলাম, তখনকার একটি গল্প মনে করতে পারি, অ্যামাজন বেসিনের লোকেরা ‘প্যারট’ শব্দটি জানত না। কারণ, তারা তোতাপাখির প্রতিটি প্রজাতির আলাদা আলাদা নাম জানত।
এই সপ্তাহে পেরুতে আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে আমি সাধারণ দর্শকদের জন্য ফ্যাক্ট শিট এবং ভিডিও স্ক্রিপ্ট বা পান্ডুলিপি কীভাবে লিখতে হয়, তার ওপর একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলাম।
আমার শিক্ষার্থীরা পাকা পেশাদার। তাদের একটি দল রাসায়নিক ব্যবহার না করে মাটি উন্নত করার জন্য বাতাস থেকে নাইট্রোজেনের জোগান পেতে লেগিউম-এর ওপর একটি ফ্যাক্ট শিট লিখছিলেন, এটি ইকোলজিক্যাল কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘নাইট্রোজেন-ফিক্সিং লেগিউমস’ শব্দগুলো সবার পরিচিত হলেও শিক্ষার্থীদের বোঝাতে আমাকে বেগ পেতে হয়েছিল। নাইট্রোজেন কী, তা সহজে বোঝা যায়Ñ এটি ইউরিয়া সারের মতো, ক্ষুদ্রচাষিরাও নাইট্রোজেন সম্পর্কে জানেন।
কিন্তু, ‘লেগিউম’ ছিল জটিল। এটি উদ্ভিদবিদ্যার একটি শব্দ। অ্যামাজনের তোতাপাখি পর্যবেক্ষদের মতো বিশ্বের অনেক অংশের ক্ষুদ্রচাষিরা লেগিউম-এর প্রতিটি জাতের আলাদা আলাদা নাম জানেন। তবে সাধারণভাবে সব ধরনের লেগিউম বোঝানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো শব্দ নেই।
আমি সাহায্য করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম, ‘আমরা লেগিউম বলতে সেই সব গাছ বোঝাতে পারি, যেগুলোতে শুঁটি হয়’।
আমার ধারণা নাকোচ করে দিয়ে আমার একজন শিক্ষার্থী বলেছিলেন, ‘না’।
বড়োদের শেখানোর একটা সুবিধা হলো, তারা শিক্ষকের চেয়ে বেশি জানেন। আমার এই শিক্ষার্থী একজন কৃষিবিদ, তাঁর পুরো কর্মজীবনে তিনি কৃষকদের সাথে লেগিউম নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলেছিলেন, নাইট্রোজেনের জোগান দেয় এমন কয়েকটি সেরা লেগিউম হলো : আলফালফা বা “বুনো গ্যারোটিলা”*, এগুলোর শুঁটি এত ছোটো হয় যে, লোকেরা তা দেখতে পায় না।
শেষ পর্যন্ত, আমরা ‘লেগিউম’-ই লিখেছিলাম এবং উদাহরণ হিসেবে শিম এবং মটরের নাম উল্লেখ করেছিলাম।
তারপর আমরা কাসকো থেকে সাইক্রেড ভ্যালি যাওয়ার পথে প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে উন্নয়নশীল পাইউরে গ্রামে পৌঁছে গেলাম। পাইউরের ক্ষুদ্রচাষিরা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দাম দেয়। তারা তাদের বিশাল দোতলা স্কুলের জন্য গর্ববোধ করে। সেখানকার স্থানীয় কিছু লোক শহরে কাজ করে, তারা পেশায় আইনজীবী ও প্রকৌশলী।
বেশ কয়েকজন স্থানীয় অধিবাসীকে আমাদের ফ্যাক্ট শিট পড়তে দিলে তারা জিজ্ঞাসাভরা চোখে উপরের দিকে তাকায় এবং বলে, ‘লেগিউম কী’ ?
আমাদের উদাহরণগুলো ‘লেগিউম’ বেঝাার জন্য যথেষ্ট ভালো ছিল না। লেগিউম-এর জন্য কোনো সহজ শব্দ ছিল না। লেগিউম বোঝার জন্য সবচেয়ে সহজ শব্দ হলো ‘লেগিউম’।
বিশ্বজুড়ে সাধারণ দর্শক-শ্রোতার জন্য লেখার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ কেননা, পেরু থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত সারাবিশ্বেরর মানুষ লেগিউম চাষ করে। তবে, ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির।
এই ফ্যাক্ট শিটের লেখকেরা শেষ পর্যন্ত এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, ‘নাইট্রোজেন ফিক্সিং লেগিউম’ বোঝানোর জন্য কোনো সংক্ষিপ্ত এবং সহজ উপায় নেই। সুতরাং তারা বলেছিলেন যে, “লেগিউম হলো ক্লোভার, লুপিন, ভেচ এবং আলফালফা-জাতীয় উদ্ভিদ, যারা ক্ষুদ্র গ্রন্থির সাহায্যে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে, যেগুলো গোলাপি বা সাদা বল বা শিকড়ে হয়। তখন গাছের বাকি অংশ নাইট্রোজেন ব্যবহার করে।”
কিছু শব্দ আছে, যেগুলোর কোনো সহজ প্রতিশব্দ হয় না। তবে এমন শব্দে সেগুলোর অর্থ নিরূপণ ও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যা সবাই জানে।
* গ্যারোটিল্লার বৈজ্ঞানিক নাম মেডিকাগো হিসপিডা।
দ্রষ্টব্য: অনুবাদকদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আন্তর্জাতিক অনুবাদ দিবসের (৩০ সেপ্টেম্বর) জন্য এই ব্লগ পোস্টটি অ্যাক্সেস এগ্রিকালচার (www.accessagriculture.org/bgl) দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল। অ্যাক্সেস এগ্রিকালচার স্থানীয় ভাষায় তার প্রশিক্ষণের ভিডিওগুলিতে বিশ্বব্যাপী অ্যাক্সেস সক্ষম করেছে এবং এর ফলে আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার লক্ষ লক্ষ কৃষকের জীবনকে পরিবর্তিত করেছে।