ছোট্ট একটি ধারণা অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। সাইমন আদ্রিকো যখন উগান্ডার পশ্চিম নাইল অঞ্চলে শরণার্থীদের স্বাবলম্বী করতে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি-উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তাদের কৃষক-প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো দেখাতে শুরু করেন তখনই তিনি এ-ব্যাপারটি বুঝেছিলেন।
বিশ্বের যে-সব দেশ বেশিসংখ্যক শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে উগান্ডা তাদের অন্যতম। উগান্ডায় চৌদ্দ লাখ শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছে। বিশ্বের অন্যতম প্রগতিশীল শরণার্থীনীতিও রয়েছে দেশটির কাছে, যা শরণার্থীদের স্বাবলম্বী হতে এবং প্রবাসজীবনে সম্মানের সাথে বাঁচতে সক্ষম করে তোলে। একাধিক পরিসেবা ছাড়াও সেখানকার শরণার্থীরা বসবাস ও চাষাবাদের জন্য জমি বন্দোবস্ত পেয়ে থাকে।
সাইমন বলেন, আমি শরণার্থী বসতিগুলোতে কথ্য ভাষায় অ্যাকসেস এগ্রিকালচার প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো দেখিয়েছিলাম, যেমন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো [ডিআরসি]-এর শরণার্থীদের জন্য ফরাসি ভাষা এবং দক্ষিণ সুদানের শরণার্থীদের জন্য আরবি ভাষা ব্যবহার করা হয়। স্বাগতিক [হোস্ট] কৃষকদের, যারা শরণার্থী বসতিগুলোর পাশে বসবাস করে এবং নিজেদের জমি শরণার্থীদের সাথে শেয়ার করে, তাদের আমি ভিডিওগুলো দেখিয়েছি স্থানীয় লুগবারা ভাষায়।
সাইমন অ্যাকসেস এগ্রিকালচার-এর আওতায় দক্ষিণ গোলার্ধজুড়ে গড়ে ওঠা এন্টারপ্রেনার ফর রুরাল এরিয়া [ERA] নেটওয়ার্কের একজন সদস্য। ইআরএ-এর সদস্যরা গ্রামাঞ্চলে ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে এবং তাদের ব্যবসায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভিডিওগুলো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে রাখে। অ্যাকসেস এগ্রিকালচার (www.accessagriculture.org/bgl) দক্ষিণ-দক্ষিণ বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় ভাষায় মানসম্পন্ন কৃষক-প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো প্রচার করে।
প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো দেখার পর শরণার্থীদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাইমন বলেন, ভিনদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে স্থানীয় ভাষায় নতুন কৌশল শিখতে পেরে তারা বেশ আনন্দিত। ভিডিওগুলো দেখার পর তারা উৎসাহ বোধ করে যে, অন্য কৃষকেরা যদি ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারে তবে তারাও তা পারবে এবং তাদের কমপক্ষে শতকরা বিশ জন কৃষক নিজেদের কৃষি-উৎপাদন বাড়াতে পেরেছে।
বসতিগুলোতে জায়গা সীমিত পরিমাণে থাকে, তাই সাইমন ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি কেবল উদ্যানবিদ্যা বিষয়ের ভিডিওগুলোই দেখিয়েছেন। ‘বস্তার ঢিবিতে সবজি ফলানো’ ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে সাইমন এই ধারণার প্রচলন করেন যে, বসতিগুলোতে প্রতিটি পরিবার সীমিত জায়গায় অল্প খরচে নানা জাতের শাকসবজি ফলাতে পারে।
সাইমন সন্তুষ্ট ছিলেন এ জন্য যে, দর্শকেরা ধারণাটি পছন্দ করেছিল। তিনি বলেন, ভিডিওটি দেখার পর তারা এই চর্চার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে এবং তারা এখন পুষ্টিকর শাকসবজি খাচ্ছে এবং প্রতিবেশীদের সাথে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য শেয়ার করছে। এই চর্চার মাধ্যদিয়ে উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রি করে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে উপার্জন করারও সুযোগ পাচ্ছে।
সাইমন যে-জন্য সবচেয়ে বেশি প্রীত হয়েছিলেন, তা হলো খুবই সহজ একটি ধারণা গ্রহণ করে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো তাদের খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নত করেছে। তিনি মন্তব্য করেন যে, স্বাগতিক [হোস্ট] জনগোষ্ঠী এবং শরণার্থীরা এখন দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে এবং নিজেদের অর্জিত জ্ঞান অন্যদের মাঝেও বিলিয়ে দিচ্ছে।
সম্পর্কিত ব্লগ
Drip irrigation saves water in South Sudan
বাড়ির উঠানে চাষাবাদ: কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষার একটি উপায়
সম্পর্কিত অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিও