

সীমিত চলাচলের এই সময়ে ওয়েবিনার যখন কনফারেন্সের জায়গা দখল করেছে, তখন প্রথমে আমি মুখোমুখি সভাগুলো মিস করছিলাম। তবে, ভারচুয়াল ইভেন্টগুলো ব্যক্তিবিশেষকে আগের চেয়ে অনেক বেশি মত প্রকাশ করতে দেয়। কৃষকদের মাঝে যখন ডিজিটাল শিখন চালু করা হয় তখনো ঠিক একই ঘটনা ঘটে। কৃষকেরা অনলাইনে তথ্য পাচ্ছেন, যেমন ভিডিও। তবে, ভিডিওগুলো যথাযথ হতে হবে। ইউটিউব ভিডিওতে একটি রান্নার রেসিপি দেখানো আর কৃষির নির্দেশনা দেখানো এক কথা নয়। কৃষির প্রস্ততপ্রণালী বা রেসিপি অবশ্যই মৌলিক নীতি অনুসরণ করে করতে হবে, যাতে কৃষকেরা ভিডিওগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, কীভাবে নতুন মত বা ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়।
সম্প্রতি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে জনগোষ্ঠীভিত্তিক প্রাকৃতিক চাষাবাদ কর্মসূচির একটি ওয়েবিনারে অংশ নেওয়ার সময় আমাকে এ-কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বক্তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিজয় কুমার, যিনি এই কর্মসূচির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাঁর লক্ষ্য হলো অন্ধ্র প্রদেশের লাখ লাখ কৃষকের কৃষিবিদ্যা বাড়ানো। বিজয় বিশিষ্ট ভ্রদ্রলোক এবং অত্যন্ত সম্মানিত একজন সাবেক সরকারি কর্মচারী। প্রতিদিন বহুলোক তাঁর সাক্ষাৎপ্রত্যাশী, তাই ব্যক্তিগতভাবে তার দেখা পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তবে আমি সৌভাগ্যবান যে, একজন সহকর্মীর মাধ্যমে ইতোমধ্যে জুমে তাঁর সাথে আমার কয়েকবার দেখা হয়েছে।
বিজয় প্রশংসা করেন যে, অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের শিখন ভিডিওগুলো মানসম্পন্ন, যেগুলো ব্যবহার করে দক্ষিণ-দক্ষিণ কৃষি-শিক্ষা সক্ষম হচ্ছে। তাঁর মতে, অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের সহযোগিতায় ভারত থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত এমন কি এর বাইরেও বড়ো জনগোষ্ঠীতে প্রাকৃতিক চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সৌভাগ্যের ব্যাপার এই যে, একটি শক্তিশালী মিত্র গোষ্ঠী আছে, যারা বড়ো ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো বুঝতে পারে এবং সেগুলো সাশ্রয়ী হতে পারে। কোনো একজনের পক্ষে সব কৃষকের কাজ ব্যক্তিগতভাবে দেখা সম্ভব নয়।
এখনো পর্যন্ত অনেকে মনে করেন যে, কৃষকেরা কেবল সহকর্মী কৃষকদের কাছ থেকেই শিখতে পারে, যারা কাছাকাছি থাকে এবং একই ভাষায় কথা বলে এবং সেই প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলোই কেবল কাজে লাগে যেগুলো স্থানীয় ভাষায় তৈরি করা হয়। অ্যাকসেস এগ্রিকালচার প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো দেখেছেন এমন অংশিদারদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে, কৃষকেরা নিজেদের সংস্কৃতি ছাড়িয়ে দূর মহাদেশের সাথিদের কাছ থেকেও শিখতে পারে। কৃষকেরা এটা দেখে অনুপ্রাণিত হয় যে, অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকেরা কেমন করে তাদের নিজস্ব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে।
অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো নির্দিষ্ট কোনো দেশের সীমানার বাইরেও কার্যকর। কেননা, এগুলো কেবল কীভাবে কাজ করতে হয় তা-ই দেখায় না বরং প্রযুক্তির পেছনের বৈজ্ঞানিক নীতিগুলোও ব্যাখ্যা করে। বিজয় বিশ্বাস করেন যে কৃষিবিদ্যার উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং কৃষকের জ্ঞান একসাথে যেতে হবে।
প্রাকৃতিক চাষাবাদ সম্মেলনের দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মাটি-অণুজীববিজ্ঞানী ওয়াল্টার জেহেন, যিনি মাটি পুনুরুদ্ধার এবং পৃথিবীকে শীতল রাখার উপায় হিসেবে মাটির জৈবপদার্থ এবং অণুজীব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেন। আমি খুশি হয়েছিলাম। কেননা, তিনি নীতিমালার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন।
যখন একজন ভারতীয় অংশগ্রহণকারী ওয়াল্টারকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তিনি প্রস্তুতপ্রণালী বা রেসিপি দিতে পারেন কি না, তখন তিনি হাসিমুখে ও ধৈর্যর সাথে ব্যাখ্যা করে বললেন, “আমাদের অন্তর্নিহিত নীতিমালার প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, আপনি যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, নীতিগুলো
বিশ্বজুড়েই প্রযোজ্য। আপনার জৈবপদার্থ প্রয়োজন; আপনাকে মাটির ভালো অণুজীব তৈরি করতে হবে এবং প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে এমন প্রবর্তকদের ব্যবহার করতে হবে। যদি কোনো প্রস্তুতপ্রণালীতে বা রেসিপিতে আপনাকে গোবর ব্যবহার করতে বলে, কিন্তু আপনার গোরু নেই, আপনি কী করবেন তখন ? উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনার যদি বল্গাহরিণ থাকে, তবে তাদের নাদা দিন, একই কাজ হবে। এটি সম্পর্কে আপনাকে একটা কিছু ধরে বসে না থাকলেও চলবে।”
আমার আগের দুটি ব্লগে (নিজে নিজে চেষ্টা করে এবং মাটি পুনরুজ্জীবিত করে) আমি বাড়ি ফিরে এসে ঠিক সেটাই করেছিলাম : আমার কাছে যে উপকরণগুলো ছিল যেমন, ভেড়ার নাদা, বাগানের ওক গাছের পাতা, গমের খড় ইত্যাদি সেগুলো ব্যবহার করেছিলাম। তবে, ধারণাগুলো আমি ভারতীয় কৃষকদের কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।
কৃষকদের সৃষ্টিশীল মন আছে এবং এই সৃষ্টিশীলতা মৌলিক নীতির দ্বারা প্রতিপালিত হয়: যদিও প্রস্তুতপ্রণালীগুলো অবশ্যই সাহায্য করে, অন্তর্নিহিত বৈজ্ঞানিক নীতিগুলো আরও ভালো করে বুঝে নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যখন এটি স্থানীয় প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত হয়। আমরা, অ্যাকসেস এগ্রিকালচার জনগোষ্ঠীভিত্তিক প্রাকৃতিক চাষাবাদকে সারা বিশ্ব ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় অন্ধ্র প্রদেশের উদ্যোগে যোগ দিতে পেরে রোমাঞ্চ অনুভব করছি।
সম্পর্কিত ওয়েবিনার
365 Days Green Cover & Pre-Monsoon Dry Sowing (PMDS)
Restoring the water cycles to cool the climate
অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের এসব বিষয় সম্পর্কিত অন্যান্য ভিডিও
মাটি ও গাছপালার জন্য ভালো জীবাণু
তরল এবং দানাদার অর্গানিক বায়োসার
কয়ার পিথ (নারকেলের ছোবড়ার আঁশ)
অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও প্ল্যাটফম
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার (Access Agriculture): ফসল ও প্রাণিসম্পদের বৈচিত্র্য, টেকসই মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মৌলিক জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে ৯০টিরও বেশি ভাষায় ২২০টি প্রশিক্ষণ ভিডিও আছে। প্রতিটি ভিডিও অন্তর্নিহিত নীতিগুলো বর্ণনা করে। যেমন, মানুষকে নতুন নতুন আইডিয়া বা ধারণা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে উৎসাহিত করে।
ইকোএগটিউব (EcoAgtube): একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিডিও প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশে^র যেকোনো প্রান্তের যে কেউ চাইলে প্রাকৃতিক চষাবাদ এবং ‘সারকুলার অর্থনীতি’ সম্পর্কিত নিজস্ব^ ভিডিও আপলোড করতে পারেন।