২০২০ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে মালাউই-তে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছিল। পরে কোভিড রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় দেশটির সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে নাগরিকদের সবধরনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে একটি ছিল কৃষি। কেননা, ওই সময়ে সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষকদের মধ্যে যোগাযোগ বেশ কমে গিয়েছিল। এটি কৃষকদের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল, এমন কি কোভিড শুরু হওয়ার আগেও কৃষকদের সাথে সম্প্রসারণ কর্মীদের সাক্ষাতের অনুপাত প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল।
লকডাউনের কারণে ‘মিডুল ফারমার্স অরগানাইজেশন’ নামের একটি কৃষকগোষ্ঠী নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এই সংগঠনটি দক্ষিণ মালাউইয়ের ব্লেন্টায়ার সিটির কাছে কামওয়েনডো গ্রামের ৮০ জন (৫০ জন পুরুষ ও ৩০ জন নারী) কৃষকের একটি সমবায় সমিতি। এই সমিতি ভুট্টা, বেগুন, পেঁয়াজ, টমেটো ও অন্যান্য সবজি যেমন কেল (পাতা কপিজাতীয়) ও বাঁধাকপি উৎপাদন করে।
২০২০ ও ২০২১ সালের চাষের মৌসুমে এই দলটি ব্লেন্টায়ার শহর এবং এর বাইরের সবজি বিক্রেতাদের সাশ্রয়ী মূল্যে তাজা পেঁয়াজ সরবরাহ করার লক্ষ্যে পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয়। দলটি বিশেষত নারী বিক্রেতাদের জন্য পেঁয়াজ উৎপাদন করতে চেয়েছিল, যাদের পেঁয়াজ সংগ্রহের জন্য প্রায়ই মালাউইয়ের সীমান্ত ছাড়িয়ে মোজাম্বিক পর্যন্ত যেতে হয়। এ প্রসঙ্গে সমিতির ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক জর্জ জেড. গোলিয়াতি বলেন, “এটি শুধু ব্যয়বহুলই নয়, তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও বটে।”
কিন্তু কাজটি সহজ ছিল না। কেননা, দলটি বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। দলের সহকারী উৎপাদন ব্যবস্থাপক অ্যাগনেস এমমিনা মন্তব্য করেন যে, “ভরা বর্ষায় রোপণ করা চারাগুলোর শতকরা ৯০ ভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।”
লকডাউনের সময় তারা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, সেগুলোর সমাধানের জন্য দলটি ডিজিটাল এক্সটেনশন উৎসগুলোর সন্ধান করতে শুরু করে এবং তারা অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিও প্লাটফর্মে পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শিখন ভিডিওগুলো পেয়ে যায়। গোলিয়াতি বলেন, “আমাদের স্থানীয় ভাষায় প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো পাওয়া গিয়েছিল, ফলে বিষয়বস্তু সম্পর্কে বুঝতে দলের সদস্যদের কোনো অসুবিধাই হয়নি।”
দলটি ভিডিও প্ল্যাটফর্ম থেকে স্থানীয় চিচেওয়া ভাষার কিছু অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিও ডাউনলোড করে এবং নিজেদের শেখার জন্য একে অপরের সাথে শেয়ার করতে শুরু করে।
এক পর্যায়ে দলটি একসাথে ভিডিও দেখার জন্য মোটর চালিত জেনারেটরের সাহায্যে চলে এমন একটি পুরনোর ছোটো টেলিভিশন ভাড়া করে। গোলিয়াতি উল্লেখ করেন, “টিভির ছবির মান খারাপ হওয়া সত্ত্বেও জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা কয়েকটি ভিডিও দেখতে পেরেছি।”
কীভাবে উত্তম উপায়ে পেঁয়াজ চাষ করা যায় ভিডিওগুলো থেকে কৃষকেরা তা শিখেছে, নার্সারিতে চারা উৎপাদন থেকে শুরু করে, জমিতে চারা রোপণ করা এবং ফসল কাটা পর্যন্ত সমস্ত উপায় তারা ভিডিও থেকে জেনেছে। ভিডিওগুলো দেখে কৃষকেরা আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠেছে যে, তারা পেঁয়াজ উৎপাদনে সফল হওয়ার জন্য ভালোভাবে শিখতে পেরেছে।
দলের একজন কৃষক ফ্রান্সিস কামবুজি বলেন, “আমরা বিশেষ করে, আমাদের চারাগুলোর নষ্ট হওয়া এড়াতে রোপণের জন্য উন্নত পদ্ধতি শিখেছি। আমরা ১.৫ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করেছি, যার মূল্য ৯ লাখ মালাউইয়ান কেয়াচা (প্রায় ১১০০ ইউএস ডলার)।” কামবুজি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, অর্জিত অর্থের একটি অংশ সংস্থার একটি কার্যালয় তৈরিতে খরচ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “এটি এমন কিছু, যা আমাদের দলের জন্য প্রয়োজন।”
মিডুল ফারমার্স অরগানাইজেশন যে ভিডিওগুলো ব্যবহার করেছে সেগুলো-সহ অ্যাকসেস এগ্রিকালচার প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো www.accessagriculture.org. এখান থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ভাষায় মানসম্পন্ন ভিডিওর মাধ্যমে কৃষকদের জন্য দক্ষিণ-দক্ষিণ শিক্ষাকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে অ্যাকসেস এগ্রিকালচার সারাবিশে^ নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এবারের সাফ্যল্যের ফলে মিডুল ফারমার্স অরগানাইজেশনের কৃষকেরা আগামী মৌসুমে আরও পেঁয়াজ রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অ্যাকসেস এগ্রিকালচার কর্মীরা মালাউইয়ের গ্রাম পর্যায়ে তাদের তরুণ উদ্যোক্তা (ইআরএ) দলের সাথে মিডুল ফারমার্স অরগানাইজেশন-এর কৃষকদের সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন। অ্যাকসেস এগিকালচার তরুণ উদ্যাক্তাদের কাছে সৌরশক্তি চালিত স্মার্ট প্রজেক্টর আছে, ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকেরাও কোনো অসুবিধায় না পড়েই ভিডিওগুলো দেখতে পারবেন।
এই সম্পর্কিত অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওসমূহ:
পেঁয়াজচাষের উপযুক্ত উর্বর জমি তৈরি
মালাউই এর কিছু ভাষায় অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওসমূহ:
চিচেওয়া/ন্যানজা, তুম্বুকা এবং চিটোঙ্গা/টোঙ্গা