বেনিনের মরি গৌরবেরা, তানজানিয়ার বোয়াজি উইনস্টন এবং ভারতের নীরজ কুমার- এরা তিনজন বিকাশমান উদ্যোক্তা। যদিও তারা ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত পটভূমি থেকে এসেছে, তবুও তারা সাধারণ একটি সূত্রে পরস্পর নিবিড়ভাবে আবদ্ধ।
এই তিন জনের সবাই আফ্রিকা ও এশিয়াজুড়ে অনুরাগী তরুণ উদ্যোক্তাদের একটি নেটওয়ার্কের অংশ, যারা নিজেদের দেশের বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায় ‘অ্যাকসেস এগ্রিকালচার’ প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো পর্দায় দেখানোর জন্য উদ্ভাবনী ও টেকসই ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে এক একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তাদের লক্ষ্য কেবল নিজেদের ব্যবসায়কে লাভজনক করা নয়, বরং এই ভিডিওগুলোর সহায়তায় কৃষক, বিশেষত নারী ও যুবকদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। তারা অ্যাকসেস এগ্রিকালচার পরিচালিত একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে, যা তাদের উদ্যোগগুলোকে পুনরায় আরো দৃঢ় করতে সহায়তা করে।
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার স্থানীয় ভাষায় মানসম্পন্ন কৃষক থেকে কৃষক প্রশিক্ষণ ভিডিও সেবা প্রদানকারী বিশ্বের নেতৃস্থানীয় একটি সংস্থা, যা দক্ষিণের কয়েক মিলিয়ন ক্ষুদ্র কৃষককে সহজে এবং কার্যকরভাবে তাদের সহকর্মীদের কাছ থেকে সেরা টেকসই কৃষি অনুশীলন এবং গ্রামীণ উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে সক্ষম করে।
মরি গৌরবেরা, বোয়াজি উইনস্টন এবং নীরজ কুমার- এরা তিন জনই ‘অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ইয়ং এন্টারপ্রেনার চ্যালেঞ্জ ফান্ড ২০১৯ বিজয়ী। পুরষ্কারের অংশ হিসেবে গ্রামীণ এই উদ্যোক্তারা [ইআরএ] একটি ‘ইন-বিল্ট কম্পিউটার’সহ সৌর-বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত একটি ‘ডিজিসফট স্মার্ট প্রজেক্টর পেয়েছেন, যার ভেতরে ৮০টিরও বেশি আঞ্চলিক ভাষায় ২০০টিরও বেশি কৃষক প্রশিক্ষণ ভিডিও-র পুরো অ্যাকসেস এগ্রিকালচার লাইব্রেরি রয়েছে।
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিওগুলো বৈজ্ঞানিক এবং স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয় করে এবং এগুলোকে শস্যদানা, শাকসবজি, শিমজাতীয় শস্য, টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা কৌশল, সংহত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা, গবাদিপশু, একুয়াকালচার, যান্ত্রিকিকরণ এবং পানি-সংরক্ষণমূলক সেচ পদ্ধতিসহ অন্যান্য নানা বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়।
ইআরএ [এন্টারপ্রেনার্স ফর রুরাল এরিয়া]-রা নিজেদের কমিউনিটির সুনির্দিষ্ট চাহিদা এবং অগ্রাধিকার পূরণের লক্ষ্যে স্মার্ট প্রজেক্টর ব্যবহার ক’রে স্থানীয় ভাষায় ভিডিওগুলো দেখায়। তারা সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টশিটগুলো ডাউনলোড করে এবং পরস্পরের মধ্যে শেয়ার করে এবং ভিডিওগুলোর উপর ভিত্তি করে আলোচনা এবং প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে।
ভারতের বিহার রাজ্যের দুরদিহ গ্রামে অবস্থিত একটি এনজিও ‘ক্ষেতি’ [অর্থ : চাষাবাদ]-এর প্রতিষ্ঠাতা নীরজ কুমার একজন ইআরএ [এন্টারপ্রেনার্স ফর রুরাল এরিয়া]। তিনি জানান, “এই স্মার্ট প্রজেক্টর ব্যবহার করার ফলে আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো এবং ‘অ্যাকসেস এগ্রিকালচার’ ভিডিওগুলোর যে হিন্দি সংস্করণ আমরা দেখিয়েছি, সেগুলো আরো প্রাসঙ্গিক, অর্থবহ এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।”
নীরজ বর্ণনা করেন, “ক্ষেতি সম্পূর্ণ কৃষির ভ্যালু চেইন বদলে বদলে দেওয়ার জন্য কমিউনিটি কৃষকেদের সাথে কাজ করছে, এগরোফরেস্টি-ভিত্তিক উদ্ভাবনী, টেকসই এবং লাভজনক কৃষি অনুশীলন করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। অ্যাকসেস এগ্রিকালচার থেকে পাওয়া স্মার্ট প্রজেক্টর এবং ভিডিওগুলো আমাদের এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে।”
তানজানিয়ার ইআরএ [এন্টারপ্রেনার্স ফর রুরাল এরিয়া] বোয়াজি উইনস্টন-এর মতে, কিশোয়াহিলিতে ব্যবহারিক অনুশীলনসহ অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিওগুলো দেখানোর পরে গ্রেটার মাহালে ইকোসিস্টেম [জিএমই] বুহিংগু ও লাগালুলা গ্রামের নিরক্ষর নারী ও যুবকদের টেকসই কৃষি শেখার পদ্ধতি কার্যকরভাবে সহজ হয়েছে।
মরি গৌরবেরার ক্ষেত্রে, বেনিনের ইআরএ [এন্টারপ্রেনার্স ফর রুরাল এরিয়া], যিনি আফ্রিকার একটি প্রতিষ্ঠান ‘আইসিটি ফর আফ্রিকান এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি’ (ICT4AAD)-এর প্রতিনিধিত্ব করেন, বেনিন সরকার তাঁকে বেনিনের উত্তরে বেনিকোয়ারা-তে পেঁয়াজ চাষ করে এমন দুটি নারী দলকে প্রশিক্ষণ দিতে বলেছিল।
প্রশিক্ষণ কোর্সের অংশ হিসেবে মরি অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওগুলো স্থানীয় বারিবা ভাষায় ব্যবহার করেছিল, যাতে তত্ত্বীয় এবং অনুশীলন দুটোই অন্তর্ভুক্ত ছিল। মরি বলেন, “প্রশিক্ষণ কোর্সগুলো আমাদের সংস্থার জন্য কেবল অর্থ উপার্জনের সুযোগই করে দেয়নি, এর বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগও করে দিয়েছিল।”
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিওগুলো প্রদর্শন করেছে এমন ইআরএ [এন্টারপ্রেনার্স ফর রুরাল এরিয়া]-দের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে, ভারত, তানজানিয়া ও বেনিনে স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে একটি স্মার্ট প্রজেক্টর এবং উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উদ্যোক্তার মরণপণ প্রেরণাকে ঘিরে সম্ভাব্য লাভের সাথে সফল ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে উঠতে পরে।