প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের জন্যই কাজ করতে করতে শেখা শক্তিশালী শিক্ষা পদ্ধতিগুলোর একটি। শিশুরা তাদের পিতামাতা ও আশেপাশের অন্যেরা কী কওে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং অনুকরণ করে।
মধ্য পেরুর হুয়াইল্লাকায়ানে আমরা মায়ো স্কুল পরিদর্শন করেছি, যেখানে একটি কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখানে আজ আমাদের চিত্রগ্রহণের শেষ দিন, স্কুলটি একটি স্কুল বাগান করার পরিকল্পনা করেছে: কোভিডের আগে তারা এটি করত এবং পুনরায় শুরু করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত।
আমরা যখন স্কুলের চৌকস ও খোলা মনের পরিচালকের সাথে দেখা করি, তখন তিনি আমাদের বলেন: “এখানে হুয়াইল্লাকায়ান জেলায় ছয়শোর-ও বেশি জাতের আলু জন্মে। এবং আমাদের কাছে অনেক রকমের স্থানীয় ফসল রয়েছে, এর পাশাপাশি প্রচুর ঔষুধী গাছও আছে। আমাদের কাছে বড়ো মটরশুঁটি ও বার্লি আছে, সুতরাং শিক্ষার্থীদের উচিত আমাদের জনগোষ্ঠীর কাছে যা যা আছে তার যথাযথ মূল্যায়ন করা। এবং তাদের জানা উচিত যে, এই শস্যগুলোর পুষ্টিগুণ কেমন, যাতে তারা এগুলো সংরক্ষণ করতে পারে। তাদের উচিত আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ করা এবং এখানে যে জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা সংরক্ষণ করা।”
কয়েক জন শিক্ষক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের কয়েক জন ছাত্র শক্ত মাটি আলগা করতে এবং কোদাল দিয়ে মাটির ঢেলা ভাঙতে শুরু করেছে এবং আমরা তাদের একজন সাহায্যকারী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এটি খুবই পরিশ্রমের কাজ এবং প্রায় দশ হাজার ফুট (তিন হাজার মিটার) উচ্চতায় আমাদের প্রায়ই শ্বাস -প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য থামতে হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পরে কয়েকজন অভিভাবকও কাজে যোগ দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনি নিজেই দেখতে পাবেন কীভাবে তারা এই ধরনের কাজ করছেন আর শিশুরাও তা অনুকরণ করছে। আমার পাশের ছেলেটি খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে, একজন অভিভাবক কীভাবে সরঞ্জামটি চালাচ্ছে এবং তারপরে শিগ্গিরই উদ্যোম ও শক্তি নিয়ে পুনরায় শুরু করছেন।
অন্য কয়েকজন কৃষক পায়ে চালানোর লাঙল নিয়ে এসেছেন, স্থানীয় কেচুয়া ভাষায় যাকে চাকুইটাকলা (chaquitaclla) বলে। এই প্রি-ইনকা (পেরুর ইনকা সা¤্রাজ্যের পূর্বের) সরঞ্জামটি এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ; খাড়া পাথুরে ঢালে মাটির ক্ষয় না করে জমি তৈরির জন্য এটিকে সবচেয়ে ভালো হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমি যখন স্কুলের সমতল খেলার মাঠে এই সরঞ্জামটি ব্যবহার করতে দেখি, তখন আমি অবাক হয়ে যাই যে, এটি কত দ্রুত মাটির বড়ো বড়ো ঢেলাগুলো ভেঙে ফেলে।
এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা প্রায় ৮২ ফুট (২৫ মিটার) লম্বা ও প্রায় দশ ফুট (৩ মিটার) চওড়া একটি জমি প্রস্তুত করেছি। আমরা যখন শেষ কয়েক ফুটের কাজ করছি তখন একজন অভিভাবক আমাকে থামিয়ে দিয়ে স্প্যানিশ ভাষায় পরিষ্কার করে বলেন যে, এখন আমাকে এখানে আলাদাভাবে জমির কাজ করতে হবে। আমি খেয়াল করিনি যে, জমির লেজের প্রান্তটি কিছুটা নিচের দিকে ঝুঁকে আছে, তাই আমাদের ওই অংশটিকে কিছুটা খাড়া করে করতে হবে, যাতে সেচের জল সহজেই সরে যেতে পারে এবং পুরো খেতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ থেকে বোঝা যায় যে, কীভাবে কৃষকেরা সব কিছুতে এগিয়ে চিন্তা করে। আমি যখন মাটি তৈরি করছিলাম, তখন সে এরই মাঝে সেচের কথা ভাবছিল।
কীভাবে রোপণ করতে হয়, তা দেখিয়ে দেওয়ার পর শিশুরা তাড়াতাড়ি পেঁয়াজ, লেটুস, ব্রকলি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করতে শুরু করেছে। অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের সাহায্য করছে, পর্যবেক্ষণ করছে এবং মাঝে মাঝে কিছু পরামর্শ দিচ্ছে। পরে তারা দেশীয় কিছু ফসলের চারাও রোপণ করবে।
বেলা দশটার মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যায়। স্কুলের মাঠের এক পাশে ফসলের খেত। তাই শিশুরা মাঠের অন্য পাশে খেলার সময় যাতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট না হয়, তার জন্য জালের বেড়া তৈরি করে দেয়। যেহেতু তারা কাঠের খুঁটিতে ধাতব তারের টুকরো দিয়ে লম্বা সবুজ জাল স্থাপন করেছে, যে খুঁটিগুলো শিক্ষকেরা আগেই মাটিতে পুঁতে রেখেছিলেন। এই শিশুদের কাজকর্ম দুর্দান্ত, এটা স্পষ্ট যে, তারা এই প্রথম এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করছে না।
স্কুলের বাগানগুলো অনেক দেশেই বহু বছর ধরে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের কৃষিকাজ শেখার জন্য এবং স্কুলে রাসায়নিকমুক্ত সতেজ ও স্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহের জন্য। এখানে যা অনন্য তা হলো অনেক কৃষক অভিভাবক বাগানটি করার জন্য সাহায্য করেছেন। শিশুরা স্কুলের প্রসঙ্গে অভিভাকদের দেখে শেখে। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শিশুরা মনে করে যে, একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের পিতামাতার সংস্কৃতির প্রশংসা করা হচ্ছে।
প্রায়শই শিশুদের তাদের নিজস্ব দেশীয় সংস্কৃতি ও স্থানীয় রীতিনীতি এবং জ্ঞানের প্রতি অবজ্ঞা করতে শেখানো হয়।
লাজ ভালভার্দে তাঁর সাক্ষাৎকারের উপসংহারে বলেছিলেন, “আমি মনে করি যে, সারাবিশে^র যুক্ত করা উচিত, যাতে আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা মূল্যবান হয়ে ওঠে।”
অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের এই সম্পর্কিত আরও ভিডিও