



দশ বছরেরও বেশি আগে পেরুর উচ্চভূমি আন্দেজ অঞ্চলে মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি কুইলক্যাস পৌরসভার কোলপার জনগোষ্ঠীতে পরিদর্শনের সময় গ্রামীণ নারীদের কথা শুনে আমরা অবাক হয়েছিলাম যে, কীভাবে তারা পনির এবং দৈ বিক্রি করার জন্য একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে মনে হয়েছিল এটি একটি লম্বা লাফ, কিন্তু জনগোষ্ঠীর সাথে আরও বেশি সময় কাটানোর ফলে তারা আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, প্রাথমিক উদ্দেশ্য থেকে উন্নয়নের প্রভাব কীভাবে বদলে যেতে পারে।
জেফ, মার্সেল ও আমি স্থানীয় এনজিও ‘ইয়ানাপাই’-এর সাথে উন্নত চারণভূমি নিয়ে একটি ভিডিও তৈরিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কৃষকেরা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের জমি দশ বছর বা তারও অধিক সময় অনাবাদি রেখেছিলেন। তারপর তারা একবছর আলু রোপণ করেছিলেন এবং তারপরের বছর ওকা, উলুকো, ব্রড বিন বা অন্য কোনো শস্যের চাষ করেছিলেন। জমির উপর চাপ বাড়ার ফলে অনাবাদি রাখার সময়কাল ক্রমে কমে আসে এবং জমির উর্বরতাও কমে যায়। গবেষকদের প্রাথমিক ধারণা ছিল যে, শেষ ফসল কাটার পর জমিতে রাইয়ের (গবাদি পশুর খাদ্য, একধরনের ঘাস-জাতীয় উদ্ভিদ) মতো উন্নত ঘাসের বীজ ছড়িয়ে দিলে তা মাটির উর্বরতা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এই ধারণাটি যেমন সৃজনশীল ছিল, তেমনি কখনওই কার্যকর হয়নি।
তবে, গবেষকেরা এবং এনজিওকর্মীরা হাল ছাড়েননি, তারা কৃষকদের তাদের পরীক্ষায় নিয়োজিত রেখেছিলেন। কৃষকেরা ক্রমান্বয়ে তাদের কাজ (এজেন্ডা) চালাতে শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে, যে-সব এলাকায় কৃষকদের সেচের পানি পাওয়ার সুবিধা ছিল, সে-সব এলাকায় তারা মিশ্র চারণভূমিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন, যেখানে বাৎসরিক এবং বরোমেসে পশুখাদ্য এবং ঘাসের মিশ্রণ রয়েছে যেমন ওটস, বার্লি, রাই ঘাস, ক্লোভার, আলফালফা ও ভেচ।
কুইলক্যাসের সকল কৃষকের এখন বিচালি চারার (ঘাস-জাতীয় পশুখাদ্য) জমি রয়েছে। এইসব জমিতে তারা গবাদিপশুকে সারাবছর খাওয়ানোর জন্য বছরের যেকোনো সময় ঘাসের চাষ করে থাকেন। যেমন, স্থানীয় একজন নারী রিকার্ডিনা রদ্রিগেজ জানান, “শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক চারণভূমিগুলো শুকিয়ে যায়, তখন গোরুগুলোর খাওয়ার জন্য কিছুই পাওয়া যায় না। সেখানে সারাবছরই বিচালি (পশুখাদ্য) রোপণ করা হয়। আমরা প্রতি দুই মাস অন্তর এগুলো কেটে ফেলি এবং এগুলো আমাদের গোরুগুলোকে রক্ষা করে।”
যখন আমরা হারমিনিও রদ্রিগেজের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি তখন তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, কীভাবে তাদের গোরুগুলো মিশ্র খাদ্য খেতে পছন্দ করে : যখন তাদের খাবারে খড়, বিচালি ও অন্য খাবারের মিশ্রণ থাকে তখন তারা সবই খায়। যখন গাভীগুলোকে ক্লোভার ও আলফালার মিশ্রণ খাওয়ানো হয় তখন তারা বেশি পরিমাণে দুধ দেয়।
আমরা যে কৃষকদের সাথে কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, মিশ্র চারণভূমি তিন থেকে চার বছর পর মাটির উর্বরতা বাড়িয়েছে। কেননা, প্রচুর শেকড়-সহ ঘাসগুলো একদিকে যেমন মাটিকে আলগা রাখে অন্যদিকে কোষগুলো বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণের মাত্রা ঠিক করে এবং এর ফলে পরের আলুর ফলন ভালো হয়। কৃষকেরা বিচালি (ঘাস-জাতীয় পশুখাদ্য) কাটার পর জমিতে কিছুটা রান্নাঘরের ছাই বা কম্পোস্টযুক্ত সারও প্রয়োগ করেন ; এতেও মাটির উর্বরতা বাড়ে।
প্রকল্পটি বিকশিত হয়েছে দেশীয় প্রাকৃতিক গাছপালা-সহ বিচালির (ঘাস-জাতীয় পশুখাদ্য) নানান প্রজাতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য, কৃষকেরা একটি ফসল হিসেবেই চারণভূমিতে ঘাসের চাষ করে এবং অন্যান্য ফসলের মতোই সার, সেচ দিয়ে এর যত্ন করে এবং এর ফসল ঘরে তোলে। কোনো কোনো কৃষক তাদের কিছু জমি স্থায়ীভাবে চারণভূমির জন্য রেখে দেয়। কারণ, তারা মনে করে যে, ভালো বিচালির চাষ আলু চাষের চেয়েও ভালো ফলন দেয়।
একটি স্থানীয় সরকারি প্রকল্প-সহ পশুসম্পদ, পশুখাদ্য ও সেচ নিয়ে কাজ করে এমন আরও দুটি প্রকল্পের বাড়তি সহায়তায় জনগোষ্ঠীর জীবনমান ক্রমাগতভাবে উন্নত হয়েছে এবং এর বেশিরভাগই নারীরা করেছেন। নারীরা যখন তাদের সমস্ত তাজা দুধ কাছাকাছি শহরে একজন ক্রেতার কাছে বিক্রি করতেন, তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা নিজেরা দৈ এবং পনির তৈরি করে বিক্রি করলে আরও অধিক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
রিকার্ডিনা রদ্রিগেজ জানান, “আমরা কাঠ জ্বালিয়ে দুধ জ্বাল দিতাম, কিন্তু এখন আমরা গ্যাসের চুলা ব্যবহার করি। আমাদের নিজস্ব বড়ো পাত্র আছে, পনির বানানোর ছাঁচ (প্রেস) আছে। আমরা সবসময় উন্নতি করছি। সাপ্তাহিক বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য সপ্তাহে একবার আমরা দৈ ও পনির প্রস্তুত করছি।”
আমরা ক্যামেরায় মহিলা সমিতির অপর একজন সদস্য লুসিয়া অ্যাভিলার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। তিনি সুন্দর করে সংক্ষেপে বলেন, “আমি সকল কৃষককে বলবো, আমাদের চারণভূমি সৃষ্টি করা উচিত, যাতে আমাদের গবাদিপশুগুলো ভালো থাকে এবং আমাদের হাতে কিছু টাকা থাকে। যদি আপনার বড়ো তৃণভোজী (গিনিপিগ) থাকে তো তারা আপনাকে ভালো ফল দেবে। আপনার ষাঁড়গুলো যদি বড়ো ও মোটা হয় তাহলে তারা আপনাকে ভালো ফল দেব। আমাদের জীবনমান উন্নত করার জন্য বিচালির (পশুখাদ্য) চাষ করাই উত্তম।”
কৃষক জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করার জন্য গবেষকেরা মুক্ত মন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নমনীয় থেকেন এবং লম্বা সময় ধরে সহায়তা করার মাধ্যমে স্থানীয় এনজিও-র সাথে কাজ করে অসামান্য প্রভাব ফেলতে পারেন, তারা প্রাথমিকভাবে যতটা আশা করেছিলেন প্রভাব তার চেয়েও বেশি পড়ে।
এই সম্পর্কিত অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিও দেখুন
Improved pasture for fertile soil