‘দ্য সয়েল উইল সেভ আস’ (মাটি আমাদের রক্ষা করতে পারে) ক্রিস্টিন ওহলসন-এর লেখা চমৎকার একটি সজীব বই। এতে ওহলসন ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে কৃষিকাজ কার্বন নির্গমন বন্ধ করতে পারে এবং পরিবের্তে বাতাস থেকে কার্বন সরিয়ে মাটিতে প্রোথিত করতে পারে।
মাটির জীবন খুবই জটিল। এক চা-চামচ মাটি এক থেকে সাতশো কোটি জীবন্ত বস্তু ধারণ করতে পারে। ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার মতো অণুজীবগুলো কার্বন-সমৃদ্ধ শর্করা গ্রহণ করে গাছপালাকে খনিজ পুষ্টি প্রদান করে। শিকারি অণুজীব প্রোটোজোয়া ও নেমাটেড (কৃমিজাতীয়) ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াগুলো-কে খেয়ে ফেলে এবং তাদের শরীর থেকে পুষ্টি-উপাদানগুলো মাটিতে ফিরিয়ে দেয়।
লোকেরা যখন মাটিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে তখন এই জীবন্ত অণুজীবগুলো মারা যায়। এরা মূলত অনাহারে মারা যায়। রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে গাছপালার আর তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। কেননা, তারা রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ওহলসন-এর বইটি পড়ার পর, এটি আমাকে হন্ডুরাস-সহ সারাবিশে^র কৃষকদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, যারা গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বলে আসছে যে, মাটি দ্রুত রাসায়নিক সারের সাথে ‘অভ্যস্ত’ বা ‘ধাতস্থ’ হয়ে পড়ে। লোকজ জ্ঞান প্রায়শই বিজ্ঞানের চেয়ে এগিয়ে থাকে।
যখন মাটি চষা হয় তখন মাটি কিছু কার্বন হারায়। জমিতে লাঙল দেওয়ার সময় মাটির ভেতরে বাতাস ঢোকে। এই বাতাস কার্বনের সাথে মিশে কার্বন ডাইঅক্সাইডে (C02) পরিণত হয়, যা বায়ুম-লে উঠে যায়। লাঙল দিয়ে চষার পর মাটি ভেঙে যায় এবং সেগুলো প্রাকৃতিক গাছপালা দিয়ে ঢাকা মাটির চেয়ে বেশি ক্ষয় হয়।
ওহলসন তাঁর বইয়ের জন্য বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাদের মধ্যে উত্তর ডাকোটার উদ্ভাবক ক্ষমতা কৃষক গ্যাবে ব্রাউন অন্যতম। যিনি ঘাস ও শিম-সহ জীববৈচিত্র্যের মিশ্রণে একধরনের কাভার শস্য ফলান। তবে, এর ফসল না কেটে তিনি এর মধ্যে গোরু চরতে দেন। তারপর তিনি জমিতে লাঙল দেওয়ার পরিবর্তে ভুট্টা বা অন্যান্য অর্থকরী ফসলের বীজ পুঁতে দেন। কোনো রকমের রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেন না।
এই মাটি উৎপাদনশীল, শ্রম ও খরচ সাশ্রয়ী এবং কার্বন শোষণ করে এবং কার্বন নির্গমন রোধ করে। এই মাটি সুস্থ এবং লাঙল দিয়ে চষা মাটির চেয়ে বেশি পানি ধারণ করে, তাই এই জমির ফসল খরা প্রতিরোধী। ব্রাউন ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর জে ফুরার ও ক্রিস্টিন নিকোলাসের মতো উদ্ভাবক বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করে এই পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা সহযোগিতামূলক গবেষণার শক্তির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ব্রাউন-ই একমাত্র কৃষক নন, যিনি মাটি সংরক্ষণের চেষ্টা করছেনÑ তবে, প্রায় এক দশক আগে ওহলসন যখন লিখেছিলেন, তখন মার্কিন কৃষি জমির মাত্র ৪.৩ শতাংশ জমি কোনো রকমের ভূমি সংরক্ষণ কর্মসূচিতে নথিভুক্ত হয়েছিল।
মাটি সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের আরও উৎসাহিত করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘নো টিল ফার্মিং’-এর ওপর আরও গবেষণা করতে হবে। যেমন, লাঙল ত্যাগ করা এবং মাটির উর্বরতা বাড়াতে কাভার শস্যের আবাদ ও গবাদিপশু চারণ উৎসাহিত করা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাসায়নিক সার উৎপাদনকারী, কীটনাশক এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত ফসলের বীজ বরদাস্ত করে এমন সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অনুদান নেওয়া বন্ধ করতে হবে। করপোরেট অর্থ বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণাকে রাসায়নিক চাষের দিকে ধাবিত করে, যদিও করদাতারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন প্রদান করেন এবং মাটির অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়ার মূল্য সমাজকেই অনেকদিন ধরে পরিশোধ করতে হয়।
সৌভাগ্যবশত, এমন অনেক কিছু আছে যা আমরা সবাই বাড়িতে, বাগানে, পার্কে এমনকি তৃণাবৃত খালি স্থানে করতে পারি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড়ো সেচের ফসল ভুট্টা নয় ; কিন্তু ‘তৃণ’ ভুট্টার চেয়ে তিনগুণ বেশি জায়গা দখল করে রাখে। রাসায়নিক ছাড়াই তৃণগুলো বেড়ে ওঠে : কম্পোস্ট দিয়ে মাটির উন্নয়নের জন্য ঘাসের সাথে গবাদিপশুর খাদ্য এবং শিমজাতীয় শস্য ফলানো যায়।
পরিবারগুলো বাড়িতে কম্পোস্ট তৈরি করতে পারে এবং তা দিয়ে বাগানে সার দিতে পারে। শহরের পার্কগুলোও কার্বন আলাদা করতে পারে। ম্যানহাটনের ‘ব্যাটারি পার্ক’টি সম্পূর্ণরূপে কম্পোস্ট এবং কম্পোস্ট চা (একধরনের তরল কম্পোস্ট) দিয়ে উর্বরা করা হয়েছে।
আমি এই বই পড়ে অনুপ্রাণিত। কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের উপযুক্ত সমাধান হতে পারে, এমনকি সমস্যা সৃষ্টির পেছনে প্রধান অবদানকারীর ভূমিকা পালনের পরিবর্তে গ্রহটিকে শীতল রাখতে সহায়তা করতে পারে।
যুক্ত হোন
২০১৫ সালে, ওহলসনের বইটি প্রকাশের ঠিক পরপর ২১টি দেশের ৬০ জন ব্যক্তি কোস্টা রিকাতে একত্র হয় এবং তারা Regenerative Agriculture (পুনর্জন্মমূলক কৃষি) ব্যবস্থা গঠন করে। সেটি হলো একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন, যা একটি অভিন্ন লক্ষ্যে সবাইকে একত্র করে। তাদের লক্ষ্য হলো, বৈশি^ক উষ্ণতা প্রতিহত করা এবং পুনর্জন্মমূলক কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈশি^ক রূপান্তর সহজতর ও ত্বরান্বিত করা এবং এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীব্যাপী ক্ষুধার অবসান ঘটানো। আপনার এলাকায় একটি অংশীদার সংস্থা খুঁজে পেতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ার জন্য
Ohlson, Kristin 2014 The Soil Will Save Us: How Scientists, Farmers and Foodies Are Healing the Soil to Save the Planet. New York: Rodale. 242 pp.
উন্নত মাটি গঠনে অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওগুলো
অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের হোস্ট করা মাটি ব্যবস্থাপনার অনেক ভিডিও আছে, সেগুলো দেখুন।