ইকুয়েডরে, গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সংগঠক ইং গুয়াদালুপে পেদিল্লা আমাকে বলেছেন যে, একটি দলে অন্তর্ভুক্তি নারীদের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সহায়তা করতে পারে। বিচ্ছিন্নভাবে নয়, দলগতভাবে কাজ করার জন্য নারীরা নেতা হন। গুয়াদালুপে এ ধরনের বেশ কয়েটি দলকে সংগঠিত হতে সহায়তা করেছেন। এটি গল্পের মতো, দল একটা বিষয়ে গঠিত হয়। এর একটি উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আর সে উদ্দেশ্য কৃষির সাথে সম্পর্কিত হতে হবে।
সম্প্রতি ইকুয়েডরের কোটোপ্যাক্সিতে, পল ও মার্সেলের সাথে নারীদের সংগঠনগুলোর ওপর একটি ভিডিও ধারণের সময় প্যারিশ (শহর) কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জুয়ান চিল্লাগানার সাথে আমদের দেখা হয়। একজন নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনাব চিল্লাগানা বেশ কয়েকটি নারী সংস্থাকে পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিটি সংস্থা এক একটি পণ্য-কে ঘিরে সংগঠিত হয়েছে।
তাঁর সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয় ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, যখন তিনি গোল্ডেন বেরি চাষ ও রপ্তানি করে এমন একদল নারীর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। ফলের ক্রেতাও সেখানে ছিলেন। চুলের জালের মধ্যে একজন ব্যক্তি ব্যাখ্যা করছেন, “আমরা শুধু অনুরোধ করেছি, আপনি কৃষি-রাসায়নিক প্রয়োগ করবেন না।” সমিতির সদস্যরা এবং পণ্যের ক্রেতা প্যাকিং প্লান্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিস্কার প্লাস্টিকের ট্রেতে বড়ো ও নিখুঁত গোল্ডেন বেরিগুলো ওজন করছিলেন।
আমরা একটি দলের সদস্য জোসেফিনা আস্তুদিল্লোর সাথে কথা বলি, নতুন এই ফল চাষ করে তাঁকে বেশ তৃপ্ত মনে হলো। তিনি আমাদের তাঁর ক্ষেতের দিকে নিয়ে গেলেন, যেখানে মিটিং হয়েছিল সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। ডোনা জোসেফিনা অত্যন্ত গর্বিতভাবে আমাদের তার ফসলের ক্ষেতটি দেখিয়েছিলেন, যেখানে তখন ফলগুলো পেকে পুরোপুরি সোনালি হয়ে উঠছিল। একজন নারী নিজে নিজে গোল্ডেন বেরি চাষ করতে পারেন, কিন্তু ক্রেতার চাহিদা মেটানোর জন্য তার দলের প্রয়োজন হয়, রপ্তানির জন্য প্রতি সপ্তাহে গুণমান সম্পন্ন এক হাজার কেজি গোল্ডেন বেরি প্রস্তুত হয়।
আমরা গুয়াদালুপের বোন বেত্রিজ পেদিল্লার সাথেও দেখা করি। তিনি ছোটো আকারের একজন দুগ্ধ-খামারি। তিনি দলের সবার দুধ একত্র করার সময় ২০টি পরিবারের নেতৃত্ব দেন। সমিতি প্রতিটি খামারে একটি ট্রাক পাঠিয়ে বড়ো ক্যানে দুধ সংগ্রহ করে এবং পরে দলের ঠান্ডা টাংকিতে স্থানান্তর করা হয়। প্রায় ১৫০০ লিটার দুধ দুজন ক্রেতা দিনে দুইবারে সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে একজন বেলা তিনটায় আসেন। এটি অনেক বড়ো একটি কাজ।
ডোনা বেত্রিজ ব্যাখ্যা করেন যে, তিনি দল ছাড়া কাজটি করতে পারবেন না। ভালো দামে দুধ বিক্রি করার জন্য তার অন্য পরিবারগুলো-কে দরকার। দুটি গোরু আছে এমন একজন খামারির কাছ থেকে ক্রতা নিজের পছন্দমতো দরে দুধ কিনতে পারে কিন্তু একটি সমিতি দরদাম করে মূল্য নির্ধারণ করতে পারে।
মারগোথ নারাঞ্জো ষাটের দশকের একজন নারী, যিনি তাঁর পুরো প্রাপ্তবয়স্ক জীবন সমিতিতে কাজ করে কাটিয়েছেন, তিনি প্রায়শই এমন দলে কাজ করতেন যেগুলোতে পুরুষেরাও কাজ করতো। তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর এলাকার অভিভাবক-শিক্ষক সিমিতি-তে, যেখানে তিনি শিশুদের সকালের নাশতার আয়োজনে সাহায্য করতেন। পরে তিনি একটি বীমা কোম্পানির সচিবের দায়িত্ব পান, প্রথমে কোষাধ্যক্ষ এবং পরে সভাপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
ডোনা মারগোথ এখন করপোরেশন অব ইনডিজেনাস অ্যান্ড পিজেন্ট অরগানাইজেশন (সিওআইসি)-এর সাথে বেশ কয়েকটি নারী সংস্থার কাজে সহযোগিতা করছেন। এ সংস্থাগুলোর সদস্যরা তাদের নিজস্ব কৃষিজাত সবজি বিক্রি করে, অতিরিক্ত শক্তি অর্জনের জন্য তারা দলবদ্ধ হয়েছে। দুঃখের বিষয়, কোভিড-লকডাউনের সময় এই কাজটি স্থবির হয়ে পড়ে। তবে, ডোনা মারগোথ পুনরায় সংগঠিত করতে শুরু করেছেন।
ইকুয়েডরে আমরা যে নারী নেতাদের সাথে দেখা করেছি, তারা সবাই কোনো-না-কোনো দলের সদস্য। এবং প্রতিটি দল গোল্ড বেরি, দুধ বা সবজি যে-পণ্যই হোক-না-কেন, একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে গঠিত। এটি ভালো একটি গল্পের মতো, প্রতিটি দলেরই কিছু বিষয় আছে, তারা শেয়ার করে নেওয়া একটি স্বপ্নের সাথে জড়িত : হয় তারা মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রির জন্য, না হয় তাদের জীবিকা উন্নত করার জন্য দল বেঁধেছে।
এবং লেখালেখি যেমন অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নত হয়, তেমনি অভিজ্ঞতার সাথে নেতৃত্বও শাণিত হয়। আমরা যে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে দেখা করেছি, তারা প্রত্যেকে বলেছেন যে, কোনো নারী যদি একটি দলে যোগদান করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কাজ করেন তবে তিনি একজন নেতা হতে পারেন।
এই সম্পর্কিত অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওসমূহ
কৃষকের বীজের অধিকার : গুয়েতেমালার অভিজ্ঞতা
স্বাস্থ্যবান মুরগি পালনে একসাথে কাজ করা
সন্তান প্রসবের পর নারীদের সহায়তা করা
কৃতজ্ঞতা
কোটোপ্যাক্সিতে কৃষকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এবং নিজের জ্ঞান আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য গুয়াদালুপে পেদিল্লা এবং সোনিয়া জামব্রানোকে ধন্যবাদ জানাই। এই ব্লগের আগের সংস্করণে মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য গুয়াদালুপে ও পল ভ্যান মেলেকে ধন্যবাদ। গুয়াদালুপে ও সোনিয়া ‘ইকোরুরাল’ নামের একটি এনজিও-এর সাথে কাজ করেন। আমাদের কাজটির জন্য অর্থায়ন করেছে ম্যাকনাইট ফাউন্ডেশনের কোলাবোরেটিভ গ্রুপ রিচার্স প্রোগ্রাম (সিসিআরপি)।