
সম্প্রতি ভারতের কর্নাটকে গ্রামীণ তরুণদের মাঝে যারা এন্টাপ্রেনরস ফর রুরাল অ্যাকসেস (ইআরএ-এস) নির্বাচিত হয়েছেন তাদের নিয়ে চারদিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালাটির আয়োজন করা হয় তরুণ ইআরএ-দের ই-সম্প্রসারণ পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে যাত্রা শুরু করার লক্ষ্যে তাদের ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহারে দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে, যাতে তারা নিজেদের জনগোষ্ঠীতে এগ্রোইকোলজিক্যাল রূপান্তরে অবদান রাখতে পারেন।
বিশ্ব মৃত্তিকাদিবস ২০২৪ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ৫ ডিসেম্বর কর্নাটক সরকারের সম্মানিত কৃষিমন্ত্রী শ্রী এন চালুভারায়া স্বামী তরুণ ইআরএ-দের হাতে স্মার্ট প্রজেক্টর নামের সৌরচালিত ডিজিটাল সম্প্রসারণ টুলকিট তুলে দেওয়ার মধ্যদিয়ে কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কর্নাটক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (কেএসডিএ) এবং জিআইজেড-ইন্ডিয়া যৌথভাবে কর্মশালাটির আয়োজন করে।
কর্মশালাটি কেএসডিএ-এর তত্ত্বাবধানে জিআইজেড-এসইউএটিআই দলের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অ্যাকসেস এগ্রিকালচার জিআইজেড-এসইউএটিআই (ভারতে এগ্রোইকোলজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন প্রসেসেস)-এর সহায়তায় পরিচালিত হয়। এই প্রকল্পের প্রধান একটি উদ্দেশ্য হলো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীগুলোর পূর্বাবস্থায় ফিরে আসাকে শক্তিশালী করা এবং গ্রামীণ তরুণদের রূপান্তরের এজেন্ট হিসেবে সম্পৃক্ত করে এগ্রোইকোলজির প্রচার করা।
উত্তর কন্নড় জেলার ইআরএ দলনেতা পূর্ণিমা হিরেমাথ বলেন, “এটি সত্যিই আমাদের জন্য একটি বড়ো সম্মান। যেহেতু এই টুলকিটে কন্নড় ভাষায় প্রায় ১০০টি কৃষক প্রশিক্ষণের ভিডিও রয়েছে সেহেতু আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাসবাসকারী প্রান্তিক কৃষকদের কাছে বিশ^জুড়ে ভালো এগ্রোইকোলজিক্যাল চর্চার মূল্যবান জ্ঞান লাভ করতে পারি। স্মার্ট প্রজেক্টরের সাহায্যে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ভিডিওগুলো দেখানো যায়।”
কর্নাটক কৃষি বিভাগের সম্মানিত কমিশনার শ্রী ওয়াই সি পাটিল (আই. এ. এস.) অ্যাকসেস এগ্রিকালচারকে এর সমৃদ্ধ বহুভাষিক ভিডিও লাইব্রেরির জন্য এবং ইআরএ উদ্যোগের জন্য অভিনন্দিত করেন। কেননা, এটি গ্রামীণ তরুণদের ব্যয়সাশ্রয়ী এগ্রোইকোলজি প্রচারে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। তিনি রাজ্যজুড়ে সর্বাধিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী এবং সুনিশ্চিত অংশীদারিত্বের কৌশল বিকাশে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অ্যাকসেস এগ্রিকালচর চারটি ইআরএ দলের সকল সদস্যকে ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিতে থাকবে, এরা একটি কঠিন এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। দলগুলো ‘সহজ সমৃদ্ধ’ (ধারওয়াদ) এবং এসসিওডিডাব্লিউইএস (উত্তর কন্নড়) পাশাপাশি ‘কালিকে ট্রাস্ট’ (ইয়াদগির) টাটা ট্রাস্টের একটি সহযোগী সংস্থার সাথে যুক্ত।
জিআইজেড-ইন্ডিয়ার জাতীয় জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নমের্তা শর্মা বলেন, “এই প্রকল্পটি রাজ্যে এগ্রোইকোলজি এবং জৈবচাষাবাদ বাড়ানোর জন্য কর্নাটক সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রশিক্ষণটি ইআরএ-দের দক্ষতা ও জ্ঞানকে শক্তিশালী করবে এবং তাঁদের আত্মবিশ^াস তৈরি করবে যাতে তাঁরা তাঁদের জনগোষ্ঠীতে অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।”
যতœ সহকারে পরিকল্পনা করা হাতে-কলমে শেখার এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নিচের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল : ● অ্যাকসেস এগ্রিকালচার সম্পর্কে পরিচিতি এবং ইআরএ উদ্যোগ সম্পর্কে ধারণা, ● স্মার্ট প্রজেক্টরের উপাদান এবং কার্যাবলি, ● ভিডিও প্রদর্শনের দক্ষতা অর্জন এবং কৃষকদের আলোচনা করার সুযোগ করে দেওয়া, ● উদ্যোক্তা মানসিকতার চর্চা, ● ব্যবসায়িক মডেল ক্যানভাস (বিএমসি) ব্যবহার করে ইআরএ ব্যবসায়ের ম্যাপিং, ● ডাটা সংগ্রহ এবং প্রতিবেদন তৈরি, ● যোগাযোগ এবং তথ্য শেয়ার করা, ● প্রতিটি ইআরএ দলের জন্য মাসিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বেঙ্গালুরুর ইউনির্ভাসিটি অব ট্রান্সডিসিপ্লেনারি হেল্থ সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি (টিডিইউ)-এ একটি ব্যবহারিক অনুশীলনীমূলক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে ইআরএ দলগুলো কাছাকাছি গ্রামের কৃষকদের সংগঠিত ক’রে স্মার্ট প্রজেক্টর ব্যবহার ক’রে ভিডিও প্রদর্শন করে। নতুন ইআরএ দলের সদস্যরা শ্রেণিকক্ষে অর্জিত সমস্ত জ্ঞান ও দক্ষতাকে বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে সফলভাবে প্রয়োগ করতে সমর্থ হন।
অন্ধ্র প্রদেশের বান্থালা মৎস্যরাজু ও বাথালা অভিষেকম এবং মধ্য প্রদেশের দেবেন্দ্র কুমার – এই তিনজন বর্তমান ইআরএ-এর সাথে জুম মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল প্রশিক্ষণার্থীদের। ইআরএ হিসেবে তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করেন এবং দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেন।
প্রশিক্ষণার্থীরা বিশেষ করে, ব্যবহারিক সেশন এবং এন্টারপ্রাইজ উন্নয়নের ওপর মস্তিষ্কের ঝড় অনুশীলন, পাশাপাশি বর্তমান ইআরএ-দের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে নেওয়ার বিষয়গুলো উপভোগ করেন। “সেশনগুলো মূল্যবান এবং বোঝার জন্য সহজ ছিল। আমরা আমাদের প্রশিক্ষকদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। কেননা, তাঁরা আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ইআরএ হিসেবে বেড়ে উঠতে হয়।”
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সহায়কের ভূমিকা পালন করেন ভারতের অ্যাকসেস এগ্রিকালচার উদ্যেক্তা প্রশিক্ষক নন্দিনী পাক্কি এবং মৌনিকা লিঙ্গিরেড্ডি। তাঁদের সহায়তা করেন আর রহমান, সাবিত্রী মহাপাত্র এবং ফিল ম্যালোন।
জিআইজেড-এসইউএটিআই-এর বাস্তবায়নকারী অংশীদার হিসেবে অ্যাকসেস এগ্রিকালচার স্থানীয় অংশীদারদের সহায়তায় ভারতে মধ্য প্রদেশ, কর্নাটক এবং আসামে এগ্রোইকোলজি এবং প্রাকৃতিক চাষাবাদে কৃষকদের সক্ষমতা বাড়তে সহযোগিতা করছে।