বৃহত্তর মাহেলে ইকোসিস্টেম (জিএমই) বিশ্বের দীর্ঘতম মিঠা পানির হ্রদ তাঙ্গানিকা। এর অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্য ও অপরূপ বন্যজীবন অবশ্যই পশ্চিম তানজানিয়ায় দেখার মতো একটি আকর্ষণীয় অঞ্চল হতে পারে।
জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি হটস্পট হিসেবে বিবেচিত জিএমই তানজানিয়ায় বিপন্ন শিম্পাঞ্জির ৯০% ও ২৫০টিরও বেশি স্থানীয় প্রজাতির মাছ রয়েছে। কোলবাস বানর, বিশাল বন্যকাঠবিড়ালি, বহুসংখ্যক পাখি ও নানান রকম উদ্ভিদের বিচিত্র প্রজাতি কেবল এই অঞ্চলেই পাওয়া যায়।
তবে, অপ্রতুল রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় এটি কাজ করার জন্য কঠিন জায়গা হিসেবে পরিগণিত। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, যাদের জীবিকা একান্তভাবেই কৃষির ওপর নির্ভরশীল তাদের পক্ষে মূল্যবান ইকোসিস্টেম ধ্বংস না করে খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ।
আশেরি স্টেফেন লেমেলো বলেন, “খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার সাথে সাথে জিএমই-তে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য টেকসই কৃষির প্রচারণা প্রয়োজন।” আশেরি স্টেফেন কিগোমা অঞ্চলে অস্থিতিশীল অনুশীলনের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ায় কিসোহোলি ভাষায় অ্যাকসেস এগ্রিকালচার প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো ব্যবহার করে উন্নত কৃষিচর্চার প্রবর্তন করেছেন।
আশেরি স্টেফেন ২০১২ সাল থেকে ইনুয়া জামি গ্রুপ সম্প্রদায় গোষ্ঠী উত্তোলন)-এর নির্বাহী সচিব হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষত, নারী ও তরুণেরা যেন ক্ষমতা অর্জনে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনার কথা উপলব্ধি করতে পারেন তা নিয়ে কাজ করছে।
আশেরি অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ইয়াং এন্টারপ্রেনিয়র্স ফর রুরাল অ্যাকসেস (ইআরএ) নেটওয়ার্কের একজন সদস্য- এটি অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের একটি উদ্যোগ (www.accessagriculture.org), যার মাধ্যমে অ্যাকসেস এগ্রিকালচার প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলোর চিত্রায়ণ ও বিতরণ করে তরুণ ও নারীদের ব্যবসায়ের মডেল দাঁড় করাতে উৎসাহিত করছে।
আশেরি অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের কাছ থেকে সৌর-বিদ্যুৎ চালিত স্মার্ট প্রজেক্টর পেয়েছেন তাই তিনি অ্যাকসেস এগ্রিকালচারকে ধন্যবাদ জানায়িছেন, এর সাহায্যে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট সুবিধা নেই সে-সব স্থানেও প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো প্রদর্শন করতে পারছেন।
আশেরি যে ভিডিওগুলো দেখান তার বেশিরভাগই ভুট্টা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পর্কিত। কেননা, ভুট্টা এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় খাদ্যশস্য। তিনি কাসাভা, শিম, চিনাবাদাম, ধান, শাকসবজি, পশুসম্পদ ও হাঁস-মুরগি লালন-পালনের ও স্বনির্ভর দল সংগঠিত করার মতো ভিডিওগুলোও দেখিয়ে থাকেন।
আশেরি বলেন, “২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি থাকা সত্ত্বেও আমি কিগোমা অঞ্চলের উভিনজা জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার কৃষকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমার সবচেয়ে বড়ো সাফল্য হলো, যে-কৃষকেরা প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো দেখেছেন এবং সেখান থেকে পাওয়া ধারণাগুলো প্রয়োগ করেছেন তাদের ভুট্টার ফলন হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ২০ বস্তা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে পরিবারগুলোতে খাবার ও আয় বেড়েছে এবং অনেক পরিবার এখন দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে সুখী জীবন যাপন করছে।”
আশেরি যদিও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ভিডিও দেখানোর একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য এখনো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কেননা তাঁর অঞ্চলের কৃষকেরা এতই দরিদ্র যে, প্রায়শই তাঁরা ভিডিওগুলো দেখার জন্য তাঁকে অর্থ দিতে পারে না। তবে, এ সত্ত্বেও তিনি কৃষকদের সাথে ভালো কৃষিকাজ সম্পর্কে নতুন জ্ঞান শেয়ার করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি সন্তুষ্ট এই কারণে যে, তরুণেরা কৃষির প্রতি ক্রমান্বয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে এবং কৃষিকে তারা একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। “তরুণেরা প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও উৎসাহী হয়ে উঠছে এবং তারা জোরেসোরে ভিডিওর দিকেও ঝুঁকছে। ভিডিওগুলোতে দেখানো টেকসই কৃষিকাজের উন্নত নীতিমালা ও কৌশলগুলো তারা তাদের অগ্রজদের চেয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারছে।”