অধ্যাপক আলেজান্দ্রো বোনিফাসিও সম্প্রতি আমাকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, বিশ্বজুড়ে তরুণেরা কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে। তবে, তাদের কাছে উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং আরও ভালো সামাজিক পরিসেবা থাকলে অনেকেই এই পেশায় থেকে যাবেন।
ড. বোনিফাসিও বলিভিয়ার উঁচু সমভূমির একটি গ্রাম আলটিপ্লানোর অধিবাসী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চার হাজার মিটার বা ১৩ হাজার ১২৩ ফুট উঁচুতে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম কৃষিক্ষেত্র। বোনিফাসিও উদ্ভিদের প্রজনন বিষয়ে পিএইচডি করেছেন এবং আলটিপ্লানোর ভিয়াচায় একটি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও তিনি লা পাজ-এর একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় (ইউনিভার্সিদাদ মেয়র দে সান আন্দ্রিস)-এ খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে উদ্ভিদের প্রজনন বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি গ্রামীণ অনেক তরুণকে আকৃষ্ট করে। বোনিফাসিও প্রতিবছর তাঁর নতুন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে একজন একজন করে নিজেদের পরিচয় দিতে এবং তারা কোথা থেকে এসেছে তা জানাতে বলেন, পাশাপাশি তাদের বাবা-মা ও দাদা-দাদি সম্পর্কেও বলতে বলেন।
এ বছর বোনিফাসিওর ক্লাসের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষার্থী এখনো খামারে বসবাস করছে এবং অনলাইনে ক্লাস করছে। তাঁর আরও শতকরা ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী কৃষকদের সন্তান বা নাতি-নাতনি। তবে, তারা এখন শহরে বাস করে। কৃষিবিদ্যার এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই তাদের বাবা-মায়ের খামারের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী যদি তাদের ওই কাজ করতে গিয়ে একাধিক সমস্যার মুখে পড়তে না হয়।
গ্রামাঞ্চলের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, আর সেগুলো হলো পরিসেবার অভাব, নিম্নমানের স্কুল, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, ক্লিনিকের অভাব এবং বিদ্যুৎ বা চলমান পানি না থাকা। যদিও ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো দূর হচ্ছিল কিন্তু এরই মধ্যে কোভিড নতুন মোড় যুক্ত করেছে। কোভিডের কারণে কেবল বার বা রেস্টুরেন্টই নয়, তরুণ-তরুণীরা যেতে পছন্দ করে এমন অনেক জায়গাতেই তালা লেগে গেছে।
শহুরে জীবনে একটি সুবিধা হলো, সেখানে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। তবে, গত বছর শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে যে, গোটা শহরে কোনো হাসপাতাল খালি ছিল না। কেননা, সেগুলো কোভিড রোগীতে পূর্ণ ছিল।
ক্লাসগুলো সব অনলাইনে চলছিল এবং সে-জন্য শহরের লোকেরা গ্রামের দিকে বাস করার মতো সুন্দর জায়গা খুঁজতে শুরু করেছিল। অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে নিজের লোকের কাছে ফিরে গিয়েছিল। কেননা, সেখানে তাদের চলাফেরায় শহরের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ছিল।
ড. বোনিফাসিও আমাকে বলেছিলেন যে, তরুণেরা ঘরে ফিরে গেলেও তারা ঠিক তাদের বাবা-মায়ের মতো করে কৃষিকাজ করাতে চায় না। কম বয়সীরা গাঁইতি বা বেলচা দিয়ে হাড়ভাঙা কাজ করতে আগ্রহী নয়। তবে, তরুণ, পারিবারিক কৃষকদের কৃষির দিকে আকৃষ্ট করতে ছোটো ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির মতো উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।
তরুণ কৃষকেরা কীটনাশকবিহীন খাবারের মতো আলাদা আলাদা ফসলের জন্য নতুন বেড়ে ওঠা বাজারগুলোর সুবিধা নিতে আগ্রহী। কৃষকেরা যতদিন পর্যন্ত কৃষিরাসায়নিকের বাস্তবসম্মত বিকল্প খুঁজে না পাবেন, ততদিন পর্যন্ত জৈবকৃষিব্যবস্থা উৎপাদন খরচ বাঁচাতে সহায়তা করবে।
সৌভাগ্যবশত, উপযুক্ত প্রযুক্তি বিষয়ের ভিডিও রয়েছে এবং অধ্যাপক বোনিফাসিও তার ক্লাসে সেগুলো দেখিয়েছেন। এ যুগের তরুণেরা ভিডিও দেখে দেখে বড়ো হয়েছে এবং তাদের দৃঢ়প্রত্যয়ী বলে মনে হয়। ড. বোনিফাসিও প্রতিবছর প্রায় ৫০জন শিক্ষার্থীর জন্য উদ্ভিদের প্রজনন এবং শস্যের রোগের ওপর একটি ফোরামের আয়োজন করেন। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় হলো রোগবালাই ছাড়া লুপাইনের [গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ] চাষ Growing lupin without disease, যা ফসল সুস্থ-সবল রাখার জন্য কিছু জৈবপদ্ধতি দেখায়।
বোনিফাসিও তাঁর শিক্ষার্থীদের স্প্যানিশ ও কেচুয়া বা আয়মারা ভাষার ভিডিও দেখতে উৎসাহিত করেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই স্প্যানিশ ভাষা ছাড়াও কেচুয়া বা আয়মারা কিংবা উভয় ভাষাতেই কথা বলেন। কেউ কেউ মনে করেন, তারা তাদের আঞ্চলিক ভাষা ভুলে যাচ্ছেন। বোনিফাসিও জানান, “ভিডিওগুলো শিক্ষার্থীদের নিজেদের আঞ্চলিক ভাষায় উদ্ভিদের রোগের নামগুলোর মতোই প্রযুক্তির ধাপগুলো শিখতে সহয়তা করে।”
কোভিড লকডাউন চলাকালীন অধ্যাপক বোৃনিফাসিও তাঁর ফোরামটি অনলাইনে স্থানান্তর করেছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের ভিডিওগুলোর লিঙ্ক পাঠিয়েছিলেন। ফোরামে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছিলেন যে, তারা বাড়িতে থাকাকালীন লুপাইন গাছের রোগের লক্ষণগুলো সনাক্ত করতে পেরেছিলেন ; ভিডিওটির জন্য তারা ধন্যবাদ দিয়েছিলেন।
অধ্যাপক বোনিফাসিও মাঝে মাঝে অ্যাকসেস এগ্রিকালচারে লগইন করে দেখেন যে, স্প্যানিশ ভাষায় কোনো ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে কি না এবং সেখান থেকে তার ছাত্রদের দেখানোর জন্য কোনো ভিডিও নির্বাচন করা যায় কি না, যাতে তারা ভবিষ্যতের কৃষক হওয়ার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য পেতে পারেন।
যে শিশুরা ছোটো ছোটো খামারগুলোতে বেড়ে ওঠে তারা প্রায়শই শহরে একটি সুনির্দিষ্ট চাকরি পাওয়ার সেতু হিসেবে বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তে যায়। তবে, অনেকে আবার কৃষিবিদ্যায় লেখাপড়া করে কৃষিক্ষেত্রেই ফিরে আসতে চায়, যদি তারা তাদের পারিবারিক কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিসেবা পায়।
অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওগুলো
উপযুক্ত প্রযুক্তিসহ যুব-বান্ধব ভিডিওগুলো দেখুন। অ্যাকসেস এগিকালচারের ভিডিওগুলো ইংরেজি ছাড়াও www.accessagriculture.org অন্যান্য ভাষাতেও দেখা যায়।