ইয়াপুচিরিস হলেন বলিভিয়ার অর্ধ-শুষ্ক ও উঁচু সমভূমিতে বিশেষজ্ঞ কৃষক-গবেষক-এক্সটেনশনিস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চার হাজার মিটার [১৩ হাজার ফুট] ওপরে দক্ষ কৃষকেরা জানেন কীভাবে গাছ ও প্রাণী, মেঘ ও তারা পর্যবেক্ষণ করতে হয়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয় করতে হয়। বিশেষত, তাদের মনের সবচেয়ে বড়ো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য : বৃষ্টি কখন শুরু হবে ? সুতরাং আমি আমার শস্য রোপণ করতে পারবো।
ইয়াপুচিরিয়াসরা সকলেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার কয়েকটি ঐতিহ্যগত [ট্রেডিশনাল] উপায় জানেন। কিছু ইয়াপুচিরিয়াস তাদের পর্যবেক্ষণগুলো একটি বিশেষ চার্টেও লিখেছেন যা তারা তাদের কৃষিবিদ সহকর্মীদের সাথে লা পাজের একটি সংস্থা প্রসুকোতে ডিজাইন করেছেন। চার্ট, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাচাগ্রামা’ বলে, ইয়াপুচিরিয়াসরা কেবল পেন্সিলের কয়েকটি বিন্দু দিয়ে বছরের প্রতিটি দিনের আবহাওয়ার রেকর্ড রাখেন, যাতে তারা দেখতে পারেন তাদের ভবিষদ্বাণীগুলো সত্য হয় কি না, এবং বৃষ্টিপাত, তুষারপাত ও শিলাবৃষ্টি তাদের ফসলের ওপরে কীরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় জ্ঞানের মূল্যায়ন করার জন্য এটি যথেষ্ট নয়, তবে এটি দিয়ে চেষ্টা করা যেতে পারে।
ইলেদোরো বালদিভিওসো প্রসুকোর একজন কৃষিবিদ। তিনি গত বছরের বেশিরভাগ সময় ‘পাচাগ্রামা’ আবাহাওয়া-ট্র্যাকিংয়ের চার্টের ফলাফল অধ্যয়নের জন্য ব্যয় করেছেন। সম্প্রতি তিনি আমাকে যেমন ব্যাখ্যা করে বলেছেন, প্রসুকো চারটি সম্পূর্ণ ‘পাচাগ্রামা’ নিয়েছিল [প্রত্যেকটি সাত বছরের মধ্যে পূরণ করা] এবং প্রতিটিতে ৪২টি কেইস রয়েছে ; প্রতিটি কেইসে একটি ক্ষেত এক মৌসুমে একজন ইয়াপুচিরিয়াস পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রসুকো-কে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সাথে রেকর্ড করা আবহাওয়ার তুলনা করে দেখার জন্য যে, ‘পাচাগ্রামা’ ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করেছে কি না, প্রধানত, সপ্তাহ দুয়েক আগে, সময়মতো বা দুই সপ্তাহ পরে চারা রোপণ করার মাধ্যমে।
আল্টিপ্লানোর আলু ও কিউনোয়া ফসলের জন্য প্রধান তিনটি ঝুঁকি হলো তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি ও অবিশ^াস্য বৃষ্টিপাত। অক্টোবরে অল্পপরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় যা ফসল রোপণের জন্য যথেষ্ট, পরের মাসে আরও বৃষ্টিপাত হয়। উত্তর-আল্টিপ্লানোতে বছরে গড়ে বৃষ্টিপাত হয় মাত্র ৪০০ মিলিলিটার [প্রায় ৩০ ইঞ্চি], এবং একটি শুষ্ক বছর ফসল ধ্বংস করে দিতে পারে।
গবেষণায় ৪২টি কেইসের ক্ষেত্রে ফসলের ব্যাপারে (অল্প, স্বাভাবিক ও ভালো) ইয়াপুচিরিয়াসের রায়কে গরম আবহাওয়ার পরিস্থিতিগুলোর সাথে তুলনা করে দেখা হয়েছে (যেমন তুষার পাতের মতো) এবং রোপণের তারিখ (আগে, মাঝে বা পরে) রোপণের তারিখের পরিবর্তন (আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে) ক্ষতি এড়াতে এবং ফসল কাটতে সহায়তা করেছে কি না, তা দেখতে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রোপণ করা গাছ বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আলু রোপণের পরপর বৃষ্টিপাত ঝুঁকপূর্ণ, আগে এবং মৌসুমের মাঝে রোপণ করলে শস্যের ওপর প্রভাব পড়ে। মৌসুমের শুরুতে লাগানো আলু তুষারপাতের ঝুঁকিতে বেশি থাকে এবং দেরিতে লাগানো আলু ফুল ফোটার সময় ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে বা দেরিতে লাগানো আলু ফুল ফোটার সময় শিলাবৃষ্টির কবলে পড়লে ফসল ধ্বংস হয়ে যায়।
ইয়াপুচিরিয়াসরা প্রায়শই কয়েক মাস আগে তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি ও বৃষ্টিপাতের সঠিক পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হন। বিজ্ঞানভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস কয়েকদিন আগে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, কয়েক মাস আগে নয়। আপনি যখন আলু রোপণ করেন তখন আধুনিক পূর্বাভাস আপনাকে জানাতে পারে না যে, শস্যটির গাছে যখন ফুল আসবে তখন আবহাওয়া কেমন থাকবে।
এটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সহায়ক, অন্তত কিছু সময়ের জন্য। দুই সপ্তাহ আগে বা দুই সপ্তাহ দেরিতে রোপণ কৃষকদের বৃষ্টিপাতের সবেচেয়ে বেশি সুবিধা নিতে সহায়তা করতে পারে কিন্তু পরে শিলাবৃষ্টি বা তুষারপাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। রোপণের তারিখগুলোর পরিবর্তন কৃষকদের একটি ঝুঁকি এড়াতে সহায়তা করতে পারে। তবে, অন্যটি নয়।
আবহাওয়া এত জটিল যে, ঝুঁকি কখনোই পুরোপুরি সামলানো যায় না। এবং যেহেতু বৈজ্ঞানিক আবহাওয়া পদ্ধতি কয়েক মাস আগে শিলাবৃষ্টি ও তুষারপাতের অনুমান করতে পারে না, সেহেতু স্থানীয় জ্ঞান একটি শূন্যতা পূরণ করে যা বিজ্ঞান কখনো প্রতিস্থাপন করতে পারে না।
পূর্বের ব্লগ স্টোরি
Cultivating pride in the Andes
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিও দেখুন