২৭ বছর বয়সী নীরাজ কুমার যখন অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ‘তরুণ উদ্যোক্তা চ্যালেঞ্জ ফান্ড ২০১৯’-এর ঘোষণার কথা শোনেন, তিনি দারুণ আগ্রহী হযেছিলেন এটা জেনে যে, বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে বহনযোগ্য ডিজিসফ্ট স্মার্ট প্রজেক্টর পাবেন। নীরাজ কুমার পূর্ব-ভারতের রাজ্য বিহারের দুরদিহ গ্রামে অবস্থিত ক্ষেতি নামে একটি এনজিও’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
যে বিষয়টি নীরাজ কুমারকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল, তা হলো প্রজেক্টরটিতে ৮০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ভাষায় এগ্রোইকোলোজি এবং গ্রামীণ উদ্যোগের উপর ২০০টিরও বেশি অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিও-র সম্পূর্ণ লাইব্রেরি সংযুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, প্রজেক্টরটির সাথে একটি ব্যাটারি এবং একটি বহনযোগ্য সোলার প্যানেলও যুক্ত আছে, যা ব্যবহার করে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ভিডিওগুলো প্রদর্শন করা সম্ভব।
নীরাজ কুমারের সংগঠনের নাম ‘ক্ষেতি’- হিন্দি ভাষায় যার অর্থ হলো ‘চাষাবাদ’। কৃষক এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিই তাদের মূল কাজ। এই সংস্থাটি ইকোলজিকাল এগ্রোফরেস্ট্রি প্রচারের মাধ্যমে বিহারের গ্রামাঞ্চলে কৃষিকে স্থায়ীত্বশীল এবং লাভজনক করার জন্য কৃষক-কেন্দ্রিক একটি ‘মধ্যস্থতাকারী’ মডেল চালু করেছে।
নীরাজ বলেন, “আমাদের অনেক কৃষক স্থায়ীত্বশীল কৃষিকাজ সম্পর্কে সচেতন নন, যা উৎপাদনশীলতা এবং লাভ বাড়ায়, পরিবেশের ক্ষতি কমায়।” তিনি আরো ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তাই আমরা প্রাকৃতিক কৃষিকাজ এবং জৈব-সারের প্রয়োগ কীভাবে করতে হয় সেসব বিষয়ে অন্য কৃষকদের মধ্যে বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকি। আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোকে যেন আরো প্রাসঙ্গিক এবং অর্থবহ করে তুলতে পারি সেই জন্য আমরা স্মার্ট প্রজেক্টর এবং অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিওগুলো পেতে আগ্রহী ছিলাম।”
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার বিশ্বের দক্ষিণ গোর্লাধ জুড়ে কাজ করে। আঞ্চলিক ভাষায় মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলোর জন্য সংস্থাটি বিশ^সেরা। এই সংস্থার ভিডিও-শিখন পদ্ধতি ছয় কোটি ক্ষুদ্র কৃষককে এগ্রোইকোলজিকাল নীতিসমূহ এবং গ্রামীণ উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে শেখায়, উন্নত গ্রামীণ জীবিকা ও স্থায়ীত্বশীল খাদ্য ব্যবস্থার দিকে পরিচালিত করে।
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ইয়াং এন্টারপ্রেনার চ্যালেঞ্জ ফান্ড তরুণদের কৃষি ভিডিও প্রচারের ব্যবসা করার উদ্ভাবনী ধারণা প্রস্তাব করার জন্য অনুরোধ করেছিল। ছয়জন অনুপ্রেরণাদায়ী প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে নীরজ একজন ছিলেন, যিনি ২০১৯ সালের আগস্টে ডিজিসফ্ট স্মার্ট প্রজেক্টর জিতেছিলেন এবং ব্যবহারের জন্য পেয়েছিলেন।
স্মার্ট প্রজেক্টরটি পাওয়ার সাথে সাথে আমরা, আমাদের টিম এবং স্বেচ্ছাসেবীরা দুরদিহ গ্রামের আশেপাশের জনগোষ্ঠীগুলোতে এটি নিয়ে যাই এবং অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিওগুলোর মাধ্যমে আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো সমৃদ্ধ হয়েছিল।” বলেছিলেন নীরজ। “এখানে লোকেরা হিন্দি বা হিন্দির কিছু উপভাষা বোঝে। তাই আমরা হিন্দিতে যে ভিডিওগুলো ছিল সেগুলোই বেশি দেখিয়েছি। তবে, স্থানীয় কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য ভাষার কিছু ভিডিও-ও দেখানো হয়।”
ভিডিওগুলো গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে কৃষিকাজের নানারকম কৌশল এবং পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সহায়তা করে, যা অধিক ফলদায়ক, স্থায়ীত্বশীল এবং ইকোলোজিকাল। যার ফলে কৃষি উৎপাদনে তাদের দক্ষতা এবং কর্মক্ষমতার উন্নতি হয় এবং আয় বাড়ে।
“তারা আমাদের এলাকার কৃষকদের জন্য দারুণ সম্পদ। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে কম পানি দিয়ে ধান উৎপাদন করা যায় এবং আরো সহজে আগাছা পরষ্কিার করা যায় আমরা এইসব ধাপে ধাপে শিখছি।” একজন কৃষক বলেছেন। “যখন আমরা অন্য জায়গার ক্ষুদ্রকৃষকদের কাছ থেকে শিখি তখন এটি শেখা সহজ। ভিডিওগুলো আমাদের অনেক ভুল সংশোধন করতেও সহায়তা করে।”
নীরাজ-এর মতে, অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিওগুলো মালচিং, ভার্মিকম্পোস্ট, সংরক্ষণ কৃষি, গাছ এবং মাটির জন্য ভালো জীবাণু, বীজ সংরক্ষণ ও মজুদ, ভাসমান সবজি বাগান এবং প্রাণিসম্পদ বিষয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষত প্রান্তিক যুবক এবং নারী কৃষকদের ব্যাপকভাবে সহায়তা করছে।
স্মার্ট প্রজেক্টর এবং এর সাথে পাওয়া ভিডিও লাইব্রেরির প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, এটি একধরনের ভিডিও অভিধান, কৃষকেরা বুঝতে পারেন ; কী শিখবেন তা নিজেরা বেছে বের করতে পারেন এবং সেগুলো থেকে সেরাটি বের করে নিয়ে আসতে পারেন।
সম্পর্কিত লিঙ্ক : Entrepreneurs for Rural Access - India https://www.ecoagtube.org/content/entrepreneurs-rural-access-india-0