কৃষক ও গণমাধ্যমকর্মী উভয়েরই নিজেদের কাজ ভালোভাবে করার জন্য তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎসগুলোতে প্রকেশাধিকার দরকার। কৃষকদের কাছে অবশ্যই যথাযথ তথ্য থাকতে হবে এবং তাদের জন্য শেখার সুযোগও অবারিত হতে হবে, যাতে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে আরও যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তথ্যের জন্য কৃষকেরা সাধারণত গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করে থাকে, বিশেষত সে-সব জায়গায় যেখানে তারা নিয়মিত কৃষি-সম্প্রসারণ কর্মীদের কাছ থেকে সহায়তা পান না।
জলবায়ু পরিবর্তন, এর প্রভাব এবং কীভাবে কৃষকেরা সেই পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে, এইসব বিষয়ে ঝুঁকিতে থাকা কৃষকদের পাশাপাশি ভোক্তাদেরও অবহিত করতে গণমাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তাদের চাষাবাদের পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। যদিও অনেক উন্নয়নশীল দেশে, কৃষি ও পরিবেশগত ইস্যু এবং উচ্চমানের যোগাযোগ উপকরণগুলোতে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক প্রবেশাধিকার সীমিত।
গাম্বিয়ার কথাই ধরা যাক, দ্য গাম্বিয়া রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন সার্ভিসেস (জিআরটিএস)-এ দেওয়া কৃষিতথ্য কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। জিআরটিএস-এর শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মসূচির সাবেক ব্যবস্থাপক ইসমাইলা সেনঘোর বলেন, “আর্থিক ও কারিগরি সম্পদের পাশাপাশি দক্ষতার অভাবে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাসঙ্গিক কৃষি-অনুষ্ঠান তৈরি করতে পারে না।”
“গণমাধ্যমকর্মী ও কৃষকদের সাথে আমার কথাবার্তার অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি যে, প্রভাব সৃষ্টি করতে এবং স্থায়িত্ব অর্জন করতে কৃষি ও পরিবেশ বিষয়ে বিশ^স্ত ও দরকারি তথ্য থাকা খুবই জরুরি।” তিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে, “তাই আমাদের মতো গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অ্যাকসেস এগ্রিকালচার প্ল্যাটফর্মের মতো তৈরী (রেডিমেট) তথ্যের বিশ^স্ত উৎস পাওয়া খুবই চমৎকার একটা ব্যাপার।”
অ্যাকসেস এগ্রিকালচার (www.accessagriculture.org) আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ভাষায় মানসম্মত শিখন ভিডিও-র মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষিণ-দক্ষিণ শিক্ষার জন্য সারাবিশ্বেরমধ্যে নেতৃত্বস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ২১৫টিরও বেশি স্বতন্ত্র প্রশিক্ষণ ভিডিও রয়েছে ; যেগুলো কৃষি-সংক্রান্ত বিচিত্র বিষয়ের ওপর ৯০টিরও বেশি ভাষায় নির্মিত। তবে, এ সবকিছুরই লক্ষ্য হলো গ্রামীণ জীবনযাত্রার উন্নতি এবং নিরাপদ এগ্রোইকোলজিকাল নীতিসমূহের ওপর ভিত্তি করে দক্ষিণ গোলার্ধে অনুকূল ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
যেহেতু অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওগুলোর সাউন্ডট্র্যাক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে প্রচারিত বেসরকারি রেডিও স্টেশনগুলোর জন্য ব্যবহারযোগ্য সম্পদ প্রদান করে সেহেতু ইসমাইলা এই অডিও ফাইলগুলো জিআরটিএস কৃষি-সংশ্লিষ্ট দর্শকদের উদ্দেশে সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করছে। গাম্বিয়াতে, গ্রামীণ আফ্রিকার অন্যান্য অংশের মতো রেডিও এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যম এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে এর ওপর নির্ভরশীল।
ইসমাইলা বলেন যে, গাম্বিয়ার গণমাধ্যমকর্মীদের পরিবেশ, কৃষি, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে সক্ষমতা বাড়াতে তিনি তার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অ্যাকসেস এগ্রিকালচার সম্পদের ব্যবহার অব্যাহত রাখবেন।
আফ্রিকার মূল ভূখ-ের সবচেয়ে ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান খরা ও উষ্ণতার কারণে বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা, এটি অনুমান করা হয় যে, মাটি ও পানির দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূমির একটি বড়ো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসমাইলা শ্রোতা-গোষ্ঠীর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায় দৃঢ় বিশ্বাসী। এটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে শিক্ষামূলক রেডিও অনুষ্ঠানগুলো একসঙ্গে শুনতে এবং সেখানে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে উৎসাহিত করে। এতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, তারা রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যা শিখেছে তার থেকে কোন চাষপদ্ধতি নিজেরা প্রয়োগ করতে পারে। মোবাইল ফোনের সাথে যুক্ত হয়ে রেডিও স্টেশন শ্রোতাদলগুলোকে প্রশ্ন করতে এবং প্রতিক্রিয়া জানতে সহায়তা করে।
ইসমাইলা বলেন, “শ্রোতা-গোষ্ঠীর সদস্যরা গণমাধ্যম প্রযোজকদের সহায়তায় তাদের অভিজ্ঞতার কথা রেকর্ড করতে পারে এবং এগুলো অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ‘ইকোএগটিউব’ (www.ecoagtube.org)-এ আপলোড করতে পারে, যাতে সেগুলো বৃহত্তর পরিসরে অংশীদারদের সাথে শেয়ার করা যায়।” তিনি আরও বলেন, “এই পদক্ষেপ গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাদারিত্ব উন্নত করার পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করবে। তাদের সম্মিলিত পদক্ষেপ টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নত কৃষিচর্চার দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
গাম্বিয়াতে কয়েকটি ভাষায় অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের কিছু ভিডিও দেখতে পারেন
66 videos in Pulaar/Peulh/Fulfulde