অর্থ বোঝানোর জন্য মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে অঙ্গভঙ্গি করে থাকে, অন্যদিকে অনেক নড়াচড়া আবার মনের অজান্তে হয়ে থাকে। শব্দের সঠিক অর্থ বুঝতে, হাত নাড়ানো আমাদেরকে সাহায্য করে। তবে শব্দ এবং হাত নাড়ানোর চেয়ে মানুষের কথা অনেক বেশি অর্থবোধক।
স্বর ও স্বরধ্বনির ওঠা-নামা (চেঁচামেচি, ফিসফিসানি), মুখের অভিব্যক্তি, মাথার নড়াচড়া (মাথা নাড়ানো) এবং দেহের ভাষা (অলসভঙ্গি বনাম সোজা ঋজুভঙ্গিতে দাঁড়ানো) - এই সবকিছুই আমাদের আবেগ ও কথার সঠিক অর্থ প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
আমরা গুনগুন (হামিং) এবং হৈচৈ ধরনের নানারকম শব্দ করি, যেগুলো ধ্বনি, কিন্তু কথা নয়। এই অ-মৌখিক যোগাযোগ বিশ্বাসযোগ্য; কেননা, এটি স্বাভাবিক। কৃত্রিম হাসি শুধু ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে; আন্তরিকতাপূর্ণ হাসির জন্য পুরো মুখ ব্যবহার করতে হয় - এই দুইয়ের পার্থক্য আমরা ধরতে পারি।
এগ্রো-ইনসাইটে যখন আমরা কৃষকদের নিয়ে ভিডিও নির্মাণ করি, তখন আমরা কখনোই তাদের বলি দিই না যে, তাদের কী বলতে হবে। আমরা প্রশ্ন করি এবং তাদের উত্তরগুলো ধারণ করি, যা আমরা পরে অন্য ভাষায় অনুলিপি ও অনুবাদ করি। উদাহরণস্বরূপ, কৃষক যদি আরবি ভাষায় বলেন, তাহলে ভিডিওটির আরবি সংস্করণে তার কণ্ঠস্বরটি (ভয়েস) ব্যবহার করা হয়। তবে ইংরেজি, ফরাসি বা অন্য কোনো ভাষার সংস্করণের জন্য অন্য কারো কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হয়।
এই শিখন ভিডিওগুলোতে, কৃষকদের বক্তব্য লিখিত ছিল না, অ-মৌখিক যোগাযোগ আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে চিত্রায়িত একটি ভিডিও-তে কৃষক মারান ব্যাখ্যা করে বলেন যে, প্রতিবেশীর সাথে তাঁর একটি সমস্যা ছিল, তাঁর মাছের পুকুরে প্রতিবেশীর কাছিমগুলো চলে আসত খাবার খেতে। কথাটি বলার সময় তিনি নিজের হাতগুলো এমনভাবে নাড়ালেন যেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল দেখালেন।
অবাঞ্ছিত অতিথিদের অপসারণ করার জন্য পেশাদার কাছিম শিকারিদের নিয়োগ করার পর সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছিল। এমন একটি ধারণা, তিনি আরামদায়ক একটি ভঙ্গিতে দুই হাত নিচের দিকে চাপড় মেরে শক্তি প্রয়োগ করে দেখিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র কর্মীরা কেউ তাঁকে এটা করতে বলে দেননি। ভিডিওটির তামিল সংস্করণ না-দেখা পর্যন্ত আপনি জনাব মারানের কথাগুলো একজন বাচিকশিল্পীর কণ্ঠে শুনতে পাবেন, কিন্তু আপনি তখনো বলবেন যে, তাঁর অঙ্গভঙ্গিগুলো তাঁর বর্ণনার সাথে মানানসই ছিল।
ভিডিও-র চূড়ান্ত সম্পাদনার সময় আমরা সাধারণত ভয়েসওভার শুরু করার আগে কৃষকের মূল কণ্ঠস্বরের কিছু অংশ রেখে দিই। এতে শ্রোতারা কিছু আবেগ শুনতে পান। উদাহরণস্বরূপ, দুগ্ধ-ছাগলকে খাওয়ানো বিষয়ক আমাদের একটি ভিডিওতে তেরেসিয়া মুথুম্বি যখন তার দুগ্ধ-ছাগলকে কলাগাছের কাণ্ড, মিষ্টি আলুর লতা ও ছোটো ঘাস খেতে দেওয়ার সময় ব্যাখা করে বলেছিলেন, ‘তারা প্রচুর দুধ দেয়।’ তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলেন, আপনি সোয়াহিলি ভাষা না বুঝলেও তাঁর কন্ঠের নির্ভরযোগ্যতা শুনতে পাবেন।
টোগোর একটি ভিডিও-তে কৃষক ফিলো কোডো জানিয়েছেন, কীভাবে ভেলভেট বিন (মুকুনা) দিয়ে ভুট্টা ঘোরানোর পরে ভুট্টার ফলন অনেক বেড়েছিল। এমন কি একজন প্রতিবেশী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি কী জাদু ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, এটি মুকুনা জাদু ছিল।’ আপনি তার চোখেও হাসি দেখতে পাবেন যেমন তার ঠোঁটে দেখতে পাবেন।
লোকে যখন হৃদয় দিয়ে কথা বলে তখন তাদের কণ্ঠস্বর, অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি এবং দেহের ভাষা দৃঢ়তা প্রকাশ করে। এমন কি শব্দগুলো যদি তাদের অন্য ভাষা থেকে নিজের ভাষায় অনুবাদ করেও নিতে হয় এবং কথাগুলো অন্য কোনো ব্যক্তিরও হয়ে থাকে। অ-মৌখিক যোগাযোগ বক্তব্যকে সমৃদ্ধ করে, এমন অকপটতা নকল করা সহজ নয়। অভিজ্ঞতায় ভরা কৃষক থেকে কৃষক প্রশিক্ষণ বাস্তব ভিডিওগুলো অ্যানিমেটেড ভিডিওগুলোর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ার এটিও একটি কারণ।
সম্পর্কিত অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিও
মুকুনা জমির উর্বরাশক্তি ফিরিয়ে আনে