১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে যখন মানুষ পালতোলা জাহাজে করে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ফসলের গাছপালা ছড়িয়ে দিচ্ছিল তখন আফ্রিকায় ভুট্টা গাছ এসেছিল। সৌভাগ্যবশত, তখন ভুট্টার অনেক পোকামাকড় ভুট্টাগাছের সাথে আফ্রিকায় পৌঁছাতে পারেনি। তবে, বাণিজ্য ও ভ্রমণের ফলে ভুট্টাগাছের কীটপতঙ্গগুলো আফ্রিকার ভুট্টাগাছের কাছে পৌঁছে যায়। আমেরিকা থেকে সবশেষে যে শুঁয়াপোকাটি আফ্রিকায় এসে পৌঁছায় তার নাম ফল আর্মিওয়ার্ম। ক্রমান্বয়ে এটি মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটি এখন আফ্রিকার প্রধান খাদ্যশস্যগুলোকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
ভুট্টাগাছ যেমন আমেরিকান কীটপতঙ্গ ছাড়াই আফ্রিকা মহাদেশে এসেছিল, তেমনি ফল আর্মিওয়ার্মও তার প্রাকৃতিক শত্রু ছাড়াই এসেছিল, যার মধ্যে দুই ডজন ক্ষুদ্র প্রজাতির পরজীবী ভিমরুল রয়েছে। যার ফলে ফল আর্মিওয়ার্ম দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে।
ফল আর্মিওয়ার্মের এমন বিস্তারে সরকার আতঙ্কিত। কেউ কেউ এটিকে হাতে পিষে নির্মূল করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করেছিল। যেমন, রুয়ান্ডায় মানুষের একটি বড়ো দল হাত দিয়ে শুঁয়াপোকা ধ্বংস করেছিল। অন্যরা কৃষকদের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর জন্য ব্যাপক প্রচারণা শুরু করে। সৌভাগ্যবশত, দুটি নতুন ভিডিওতে দেখানো হয় যে, ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে কীটনাশকের বিকল্প রয়েছে।
ভিডিওগুলো দেখায় যে, ফল আর্মিওয়ার্মের ক্ষতির পরিমাণ প্রায়ই বাস্তবের চেয়ে খারাপ বলে দেখানো হয়। শুঁয়াপোকারা ভুট্টাাগাছের ফাঁক দিয়ে ছিদ্র করে খায় এবং এতে পুরো গাছে করাত দিয়ে কাটা ভেজা কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে রয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু চারাগাছের প্রাথমিক ক্ষতি সত্ত্বেও গাছপালা সাধারণ ক্ষতি সামলে ওঠে এবং পূর্ণ শিষ বা মঞ্জরী বিকশিত হয়।
কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক হলো ফল আর্মিওয়ার্ম স্বগোত্রভোজী অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের খেয়ে ফেলে। ভুট্টাগাছের প্রতিটি চক্রাকারের ভেতরে একটি ফল আর্মিওয়ার্ম একা বাস করে এবং সেখানে আসা যেকোনো ছোটো আর্মিওয়ার্মকে সে খেয়ে ফেলে। সুতরাং একটি ভুট্টাগাছকে খুব কমই একই সময়ে একাধিক আর্মিওয়ার্মের অত্যাচার সহ্য করতে হয়।
আফ্রিকা মহাদেশে আসার সময় যদিও আর্মিওয়ার্ম তার বিশেষ শ্রেণির প্রাকৃতিক শত্রুদের ফেলে এসেছিল, একদিন যখন আর্মিওয়ার্ম আফ্রিকায় এসেছিল তখন তারা পিঁপড়া, কেন্ন, গুবরে পোকা-সহ স্থানীয় অন্যান্য উপকারী পোকামাকড়ের মুখোমুখি হয়। স্থানীয় উপকারী পোকামাকড়েরা শিগ্গিরই শুঁয়াপোকাদের আক্রমণ করে এবং তাদের খেতে শুরু করে।
এফএও (ইউএন’স ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন) কৃষকদের আর্মিওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণ শেখানোর জন্য মাঠ স্কুল (ফিল্ড স্কুল) চালু করে। যে কৃষকেরা মাঠ স্কুলে অংশ নিয়েছিল তারা দ্রুত ল্যাটিন আমেরিকার কৌশলগুলো শিখে ফেলেছিল, যেমন ভুট্টার ডাঁটার চক্রাকার বৃত্তে (হোর্লস) মাটি প্রয়োগ করা। তবে, কেনিয়ার কৃষকেরাও তাদের নিজস্ব কৌশল উদ্ভাবন করে, যেমন আর্মিওয়ার্ম মারার জন্য পিঁপড়াকে আকৃষ্ট করতে তারা ভুট্টাগাছে রান্নাঘরের তেলের কাষ্ঠা (কুকিং গ্রেজ) ঘসে দেওয়া এবং ভুট্টার ডাঁটার চক্রাকার বৃত্তে (হোর্লস) তামাকের নস্যি (টোবাকো স্নাফ) মিশিয়ে বালি ছিটিয়ে দেওয়।
কৃষক মাঠ স্কুলগুলো কীটপতঙ্গের ইকোলজি শেখানোর একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে, যাদের নতুন তথ্যের দরকার হয় এমন খুব অল্প সংখ্যক কৃষকের কাছে মাঠ স্কুলগুলোর সুবিধা পৌঁছায়। সৌভাগ্যবশত, যে কৃষকেরা মাঠ স্কুলে যেতে পারেনি, তারা ইতোমধ্যে যারা মাঠ স্কুল থেকে শিখেছে তাদের কাছ থেকে শিখতে পারবে, আর্মিওয়ার্ম ভিডিও দেখেও শিখতে পারবে। ভিডিওগুলো একসেস এগ্রিকালচার প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ভাষায় বিনামূল্যে দেখতে পাওয়া যায়। রাসায়নিক ছিটিয়ে ফল আর্মিওয়ার্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে আরও অনুবাদ সাহায্য করবে।
এক্সেস এগ্রিকালচার সম্পর্কিত ভিডিও
কাটুই পোকা আক্রমণের বিরুদ্ধে দলগত দমন
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কাটুই পোকা দমন
কৃতজ্ঞতা
ফল আর্মিওয়ার্ম সম্পর্কিত ভিডিওগুলো ম্যাকনাইট ফাউন্ডেশন’স কোলাভেরেটিভ ক্রপ রেসার্স প্রোগ্রাম (সিসিআরপি)-এর অর্থায়নে জাতিসঙ্ঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন (এফএও)-এর সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়েছে।
ফটো: এরিক বোয়া
ফল আর্মিওয়ার্মের বৈজ্ঞানিক নাম : Spodopterafrugiperda (Lepidoptera: Noctuidae).