মাটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণ আছে, সেগুলো বেশি পরিমাণে কার্বন ও পুষ্টি ধরে রাখে এবং বৃষ্টির জল আরও ভালোভাবে শুষে নিতে ও ধরে রাখতে পারে। এই সবগুলোই বিপর্যস্ত জলবায়ুর এই সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু মাটিতে জীবের পরিমাপ করা সময়সাপেক্ষ একটি কাজ হতে পারে, কেননা, এটি কেউ কী পরিমাপ করতে চায় তার ওপর নির্ভর করে। যদিও ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক খালি চোখে দেখা যায় না, পিঁপড়া, কীড়া ও কেঁচো দেখা যায়।
কিন্তু বলিভিয়ায় আমরা যে-প্রশিক্ষণ ভিডিওগুলো শুট করেছি তার একটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থা পিআরওআইএনপিএ ফাউন্ডেশনের এলিসিও মামানি আমাদের সতর্কতার সাথে দেখান যে, আপনি কীভাবে কৃষকদের সাথে দৃশ্যমান মাটির জীবগুলো পরিমাপ করতে পারেন। মাটির জীবন পরিমাপ করার জন্য একটি মান পদ্ধতি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনি মূল্যায়ন করতে চান যে, কীভাবে নির্দিষ্ট কৃষিচর্চাগুলো আপনার মাটির জীবনকে প্রভাবিত করে।
একদিন খুব ভোরে আমরা আনা মামানি ও রুবেন চিপানা-কে তাদের বাড়ি থেকে তুলে আল্টিপ্লানোর একটি ক্ষেতে নিয়ে যাই, যেটিতে কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ করা হচ্ছে এবং সেখানে কোনো জৈবসার দেওয়া হয়নি। লা পাজ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে চিয়ারুমানি, পাটাকামারায় কৃষকেরা যৌথ গবেষণার মাধ্যমে জেনেছে যে, ক্ষেতের একটি অংশে বেশি জীবন্ত প্রাণ আছে এবং অন্য প্রান্তে কম, তাই তারা ক্ষেতের ভিন্ন ভিন্ন তিনটি অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে।
একটি কোদাল দিয়ে তারা ২০ সেন্টিমিটার চওড়া, ২০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০ সেন্টিমিটার গভীর একটি গর্ত করে মাটি তুলে নেয়। তারা সাবধানে এইসব মাটি সাদা রঙের ব্যাগে রাখে এবং ব্যাগের মুখ টাইট করে বেঁধে দেয়, যাতে জীবিত প্রাণগুলো পালাতে না পারে। কেননা, কেঁচো এবং অন্যান্য জীবন্ত প্রাণ দ্রুত নড়াচড়া করে।
তারপর আমরা অন্য জায়গায় আরেকটি ক্ষেতে যাই, যেখানে জৈবসার ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেখানে জৈবশাকসবজি উৎপন্ন হয়, সেখান থেকে আরও তিনটি নমুনা সংগ্রহ করি। এই নমুনাগুলো নীল রঙের ব্যাগে রাখা হয় এবং সুন্দর করে লেবেল লাগানো হয়।
একটি গাছের ছায়ায় আরও কয়েকজন কৃষক জড়ো হয়েছেন জীবন্ত প্রাণ গণনা করার জন্য। একবারে এক মুঠ করে মাটি তারা প্রতিটি ব্যাগ থেকে নিয়ে খালি ট্রেতে রাখে। যখন তারা একটি জীবন্ত প্রাণকে বের হয়ে আসতে দেখে তখন সাবধানে সেটিকে তুলে নেয় এবং এলিসিওকে জানায়, কত কেঁচো, কত পিঁপড়া, কত উই পোকা, কত গুবড়ে পোকা, কত মাকড়সা আর কত কীড়া বের হয়ে আসে এলিসিও তা লিখে রাখে ।
একঘণ্টা পরে ফলাফলগুলো একত্র করা হয় এবং নমুনাগুলোর মধ্যে তুলনা করা হয় : যে-জমিতে জৈবসার দেওয়া হয়েছে কেবল সেই মাটিতে অনেক কেঁচো রয়েছে। কৃষকেরা দলবদ্ধভাবে ফলাফলগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং একটি উপসংহারে পৌঁছান : যদি আপনার জমিতে কিছু জীবন্ত প্রাণ থাকে, তাহলে পশুর বর্জ্য থেকে বানানো সার বা কম্পোস্ট প্রয়োগ করে এবং জমিতে ফেলা আসা ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে না ফেলে আপনি মাটির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারেন। আপনি কম চাষ করে মাটির জীবন উন্নত করতে পারেন। কেননা, লাঙল মাটির মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং প্রাণীদের বিরক্ত করে, যেগুলো মাটিতে উর্বরতা জোগায়।
বলিভিয়া ভ্রমণশেষে দেশে ফিরে আসার পর, আমরা যেসব সংগঠন কৃষকদের কাছ থেকে শিখেছি, আমি এখনও সেগুলোর প্রতিফলন ঘটাচ্ছি। যখন মার্সেলা আমাদের অফিসের সামনের ক্ষেতগুলোর দিকে নির্দেশ করে তখনও তাদের সাথে প্রাসঙ্গিক গবেষণার বিষয়ে কথা হয়। মার্চে বসন্তের শুরুতে ছুছন্দরীরা (কুঁতকুঁতে চোখযুক্ত একধরনের লোমশ প্রাণীবিশেষ) বেশ সক্রিয় থাকে। এটি লক্ষ্য করার মতো যে, বামদিকের যে ক্ষেতটি কয়েক বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে, যেখানে লাঙল বা সার দেওয়া হয়নি সেখানে ছুছন্দরীরা গর্ত খুঁড়ে মাটির অনেক ঢিবি (মৌলি হিলস) তৈরি করেছে। ডানদিকের ক্ষেতটি, যেটি নিবিড়ভাবে দেখাশোনাা করা হয়, সেটিতে ছুছন্দরীদের তৈরি করা একটিও মাটির ঢিবি নেই।
জমিতে লাঙল দিলে জৈবপদার্থ কমে যায়, যেগুলো কেঁচোর খাবার। হার্বিসাইড ও কীটনাশক কেঁচো ও মাটির জীবনকে হত্যা করে। এছাড়াও তরল সার, যা ফ্ল্যান্ডার্স ও নেদারল্যন্ডসজুড়ে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। এগুলো কেঁচো মেরে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন গোরু অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ খায়। তরল সারে পশুখাদ্যে ব্যবহৃত ভারি ধাতু যেমন জিং ও তামা থাকতে পারে।
কেঁচো-কে মাটির স্বাস্থ্যের জৈব নির্দেশক হিসেবে ধরা এবং ব্যবহার করা যেতে পারে। যখন কৃষকগোষ্ঠীর সাথে যৌথ গবেষণা করা হয় তখন এটি কৃষকদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কীভাবে নির্দিষ্ট কৃষির্চ্চা তাদের জমির মাটির স্বাস্থ্য এবং খামারের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বকে প্রভাবিত করে। যা হোক, আপনার হাতে যদি মাটির নমুনা সংগ্রহ করার মতো সময় না থাকে, তবে আপনি মাটির ওপরের চিহ্ন ছুছন্দরীদের খোঁড়া মাটির ঢিবি (মৌল হিল) দেখেও মাটির স্বাস্থ্য কেমন তা বুঝতে পারবেন।
সম্পর্কিত অ্যাক্সেস এগ্রিকালচার ভিডিও