শুষ্ক মৌসুমের শেষের দিকে আফ্রিকান সাভানা অঞ্চলের অনেক পরিবার তাদের সঞ্চিত খাদ্যশস্যের মজুদ শেষ করে ফেলে। এ সময়ে স্থানীয় বাজারে সবজি পাওয়া কঠিন। নিষ্ফলা ক্ষুধার মৌসুমে গ্রামীণ জনগণের সামান্য আমিষের জোগান হিসেবে বন্যপ্রাণীর মাংসই একমাত্র অবলম্বন। এই কারণে উন্নয়ন সংস্থাগুলো কয়েক দশক ধরে বন্যপ্রাণী ধরতে ঝোপঝাড় জ¦ালিয়ে দেওয়ার মতো ধ্বংসাত্মক প্রথা বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিষ্ফলা মৌসুমে কিছু খাবার ও আয় নিশ্চিত করার একটি বিকল্প উপায় হলো কাজু বাদাম ও আম গাছ জন্মানো। কিন্তু শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবং নিরাপত্তাহীন বাজারের কারণে কৃষকদের পক্ষে তাদের রোপণ করা গাছ ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফুল ও ফল ধরার মৌসুমে প্রায়ই আগাছা ও গুল্মজাতীয় গাছ কেটে ফেলতে দেরি হয়ে যায়, এ সময়ের মধ্যে অন্যেরা ঝোপেজঙ্গলে যে আগুন জ¦ালায় সে আগুন কিছুক্ষণের মধ্যে আবাদি জমিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সম্পূর্ণ বাগান জ¦ালিয়ে ছাই করে ফেলতে পারে।
উন্নয়ন সংস্থাগুলো ক্রমান্বয়ে বুঝতে শুরু করেছে যে, সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা এবং স্থানীয় মূল্য সংযোজনই এগিয়ে চলার উপায়।
অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের (www.accessagriculture.org) ভিডিও প্ল্যাটফর্মের একটি ভিডিওতে বেনিনিজ এনজিও ডিইডিআরএএস সুন্দরভাবে দেখায় যে, নিষ্ফলা মৌসুমে কীভাবে কাজু বাদামের ক্ষেতে একই সাথে চিনা বাদাম ও সয়াবিন চাষ করে পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করা যায় এবং এই প্রক্রিয়ায় ঝোপঝাড় ধ্বংসকারী আগুন জ¦ালানোকে নিরুৎসাহিত করা যায়। ডিইডিআরএএস কীভাবে সয়া থেকে পনির তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে গ্রামীণ নারীদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ ভিডিও তৈরি করেছে, যা মান উন্নয়নের একটি ভালো উদাহরণ।
উপরন্তু, কাজু বাদাম ও আম গাছ ছাড়াও কৃষকেরা অন্যান্য স্থানীয় প্রজাতি যেমন, নেরে (Parkia biglobosa) এবং করিটি বা শিয়া বাদাম গাছের (Vitellaria paradoxa) ব্যবস্থাপনা করতে পারে। এই বন্য আদি গাছগুলো সাভানা অঞ্চলের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, এছাড়াও নিষ্ফলা মৌসুমে এ গাছগুলো ফল ও বাদাম দেয়। নেরে আর শিয়া বাদাম গাছ এখানে হাজার হাজার বছর ধরে বেড়ে উঠেছে এবং এগুলো তুলনামূলকভাবে আগুন প্রতিরোধ করতে সক্ষম। নেরের বীজ ঐতিহ্যগতভাবেই শুকানো হয়, রান্না করা হয় এবং ‘সৌমবালা’ তৈরি করতে গাঁজন দেওয়া হয়, এটি একটি মসলা, যা অনেক ধরনের খাবারে স্বাদ নিয়ে আসে।
কিন্তু জ্বালানী কাঠের ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা চাহিদা মেটাতে আরও বেশি পরিমাণে নেরে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। যদিও জ্বালানী কাঠের সংকট যতটা মনোযোগের দাবি রাখে ততটা সে পায় না, পুষ্টিবিদেরা এটি লক্ষ্য করেছেন এবং স্থানীয় সৌমবালার বদলে গাঁজানো সয়াবিন ব্যবহার করার একটি উপায় বের করেছেন। মালিভিত্তিক এনজিও এএমইডিডি এই চর্চাটির একটি চমৎকার প্রশিক্ষণ ভিডিও তৈরি করেছে, যেটি অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ভিডিও প্ল্যাটফর্মেও রয়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকার বনাঞ্চলে ঘাস কাটে এমন জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান হার, মাংসের প্রচুর ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের বিকল্প উৎসের বিকাশে উৎসাহী করছে। আফ্রিকাজুড়ে একজন প্রত্যক্ষ করতে পারেন যে, কীভাবে প্রধানত নারী ও তরুণেরা ঘাস কাটা, হাঁস-মুরগি, খরগোশ ও অন্যান্য ছোটো গবাদিপশুর ব্যবসা গড়ে তুলেছে।
অনেক প্রশিক্ষণ ভিডিওতে ছোটো গবাদিপশু পালন, বরবটি বা শিমজাতীয় গাছের সাথে আন্তঃফসল উৎপাদন এবং গ্রামীণ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে বন্যপ্রাণী শিকারের কার্যকর বিকল্প প্রস্তাব করে। এই উদ্যোগগুলো গ্রামীণ জনগণকে তাদের প্রতিকূল পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে বনের আগুন নেবানো আরও কার্যকর বলে প্রমাণিত হতে পারে। আচরণ পরিবর্তনের প্রচারের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সমাধান সবসময়ই উত্তম।
এক্সেস এগ্রিকালচার সম্পর্কিত ভিডিও
কাজু বাগানে একইসাথে ‘বাৎসরিক শস্য’ চাষ
স্থায়িত্বশীল ভূমি ব্যবস্থাপনা - কৃষি-বনায়নে উদ্যান
শিয়া বাদামের ফসল তোলা ও সংরক্ষণ
আপনার বাগানে উইভার-পিঁপড়া হতে দিন