<<90000000>> দর্শক
<<240>> উদ্যোক্তা 17টি দেশে
<<4135>> টি কৃষিবাস্তুবিদ্যা ভিডিও
<<105>> ভাষা উপলব্ধ

মাইক্রো-শেফ বা অণুজীব-রাঁধুনী

এই যুগে যখন বহু সমাজ ফাস্ট ফুড এবং সুবিধাজনক তৈরি খাবার খাচ্ছে তখন আমি সম্প্রতি কোরিয়ান এয়ারে বাড়ি ফেরার সময় একটি তথ্যচিত্র দেখে খুশি হয়েছিলাম, যেখানে দেখানো হয়েছে, কীভাবে বিশ^জুড়ে নাগরিক, বিজ্ঞানী ও রাঁধুনীরা স্থানীয় খাদ্য এবং খাদ্যসংস্কৃতির গুরুত্ব লালন এবং প্রচার করতে উঠে পড়ে লেগেছে।  

‘দ্য শেফ অব টাইম’ শিরোনামের ডকুমেন্টারির উপস্থাপক ডাস্টিন ওয়েসা একজন আমেরিকান রাঁধুনী (শেফ)। তিনি গত ১৫ বছর ধরে কোরিয়াতে বসবাস করছেন। ডাস্টিন ওয়েসিয়া ‘ম্যাকগেওয়লি’র মতো গাঁজন দেওয়া খাবার ও পানীয় যেমন, দুধ দিয়ে বানানো হালকা ফেনাযুক্ত ভাতের মদ তৈরির বিশেষজ্ঞ।

তাঁর প্রারম্ভিক কথনে তিনি সাবলীল কোরিয়ান ভাষায় বন্ধুত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, খাবারে মিশ্র স্বাদ মানুষ তৈরি করে না, বরং লক্ষ লক্ষ অণুজীবের (ইস্ট, ল্যাকটো-অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক) সাহায্যে তৈরি হয়। এই অণুজীবগুলোকে ডাস্টিন হাসির ছলে ‘মাইক্রো-শেফ’ (অণুজীব-রাঁধুনী) বলেন। আমরা যদি রান্নার সময় এই অণুজীবগুলোর সহযোগিতা চাই তবে, আমাদের সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন, যাকে ওয়েসা সুস্বাদু খাবার ও পানীয় তৈরির মূল উপাদান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন।    

প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখানোর সময় এবং একমুঠো বনের মাটি তুলে নেওয়ার সময় ডাস্টিন ওয়েসা অণুজীবের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য চিত্রিত করেছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন যে, তারা আমাদের চারপাশে : বাতাসে, মাটিতে, গাছপালা এবং গ্রহের প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে আছে।

একজন কোরিয়ান বিজ্ঞানী সাধারণ মানুষের ভাষায় ব্যাখ্যা করে বলেন যে, গাঁজন ও ক্ষয় মূলত একই প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে অণুজীবগুলো প্রকৃতির উপাদানগুলোকে ভেঙে দেয়। কিন্তু পচনের বিপরীতে, খাদ্য সংরক্ষণ এবং উৎপাদনের জন্য গাঁজন মানুষের জন্য তাৎক্ষণিক উপকারী।    

প্রায় চার হাজার বছর আগে মিশরে প্রথম গাঁজন দেওয়া রুটি তৈরি হয়েছিল। সম্ভবত বাতাসে চারপাশে উড়তে থাকা প্রাকৃতিক ইস্টগুলো খোলা বাতাসে রাখা গমের ময়দার উপর পড়েছিল। এই মুহূর্ত থেকে ইস্ট ময়ান দেওয়া ময়দার অংশ হবে, ফলে ময়দার ময়ান ফুলে উঠবে।

যদিও সারাবিশে^ নানা সমাজে নিজস্ব গাঁজন-কৌশল তৈরি হয়েছে, কিন্তু ১৯ শতকের আগ পর্যন্ত মানুষ এটা বুঝতেই পারেনি যে, অণুজীবগুলোর কারণে খাদ্য ও পানীয় গাঁজন হয় বা নষ্ট হয়। (অণুবিক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে লুই পাস্তুর জীবাণুর সাহায্যে গাঁজন-প্রক্রিয়া পরীক্ষা করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে, কীভাবে তাপ ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে। এর ফলে ‘প্যাস্টরাইজেশন’ [পাস্তুরিতকরণ] নামকরণ হয়েছিল।)

বিশে^র বহু দেশে রুটি, বিয়ার ও ওয়াইন তৈরিতে ‘স্যাকারোমাইসিস সেরাভিসি’ নামে একটি মাত্র প্রজাতির বাণিজ্যিক ইস্ট ব্যবহৃত হয়। এই এককোষী ছত্রাকের অণুজীবের বিভিন্ন স্ট্রেইন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য গবেষণাগারে একে বহুগুণ করা হয়। আজকাল খাদ্যশিল্পে অণুজীব একটি ব্যয়বহুল উপাদান হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর কোরিয়া তাদের অত্যন্ত জনপ্রিয় বেকারি ও পেস্ট্রি শিল্পে ব্যবহারের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলারের ইস্ট আমদানি করছে। 

 

প্রকৃতিতে অণুজীব নিয়ে গবেষণা করা একটি জটিল বিষয়। কারণ, তাদের লক্ষ লক্ষ প্রজাতি রয়েছে এবং  এইসব প্রজাতি ও তাদের পরিবেশের মধ্যে অগণিত মিথস্ক্রিয়া হয়। এখন পর্যন্ত অণুজীবের প্রায় ১৬০০ প্রজাতি সনাক্ত করা হয়েছে যেগুলো সারাপৃথিবীতে খাদ্য সংরক্ষণ এবং খাদ্য তৈরিতে অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। এই সংখ্যা আনুমানিক দেড় লাখ প্রয়োজনীয় প্রজাতির একটি ছোট্ট ভগ্নাংশ মাত্র।    

যখন কোরিয়ান বিজ্ঞানীরা একটি স্থানীয় ইস্ট আবিষ্কার করেন, যা রুটি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তখন তারা দ্রুত এর সংখ্যা বাড়িয়ে বাজারজাত করে এবং দেশটির লাখ লাখ ডলার সাশ্রয় হয়।

প্রামাণ্যচিত্রটিতে বৈশি^ক পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জীবাণু বৈচিত্র্যের মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যখন সমগ্র বিশ^ খাদ্য তৈরি করার জন্য অণুজীবের কয়েকটি মাত্র প্রজাতির উপর নির্ভরশীল, তখন আমাদের খাদ্যব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের অস্পষ্টতার দরুন আরও ঝুঁকিপ্রবণ হয়ে উঠবে।

প্রধান খাদ্যশস্যের বীজ বড়ো বড়ো কয়েকটি মাত্র কোম্পানির হাতে থাকার মতো একই ভুল যেন আমরা এক্ষেত্রে না করি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, স্থানীয় অণুজীবগুলো ব্যক্তিবিশেষের হাতে থাকার চেয়ে জনসাধারণের কাছে সুরক্ষিত থাকবে। তবেই আমরা স্থানীয় খাদ্যসংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে পারবো।

অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের এই সম্পর্কিত অন্যান্য ভিডিও দেখুন

রেনেট তৈরি

টাটকা পনির তৈরি

সয়া পনির তৈরি

© Copyright Agro-Insight  

 

আপনি কিভাবে সাহায্য করতে পারেন.. আপনার উদার সাহায্য আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকদের কৃষি পরামর্শের জন্য তাদের ভাষায় আরও ভালভাবে পৌঁছাতে সক্ষম করবে।.

Latest News

তরুণ পরিবর্তনকারীরা ভিডিও ব্যবহার করে এগ্রোইকোলজিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন

অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ২৫-এ এপ্রিল ২০২৪ তাদের নতুন বই “ইয়াং চেঞ্জমেকার”- প্রকাশের ঘোষণা দিতে পেরে দারুণ আনন্দিত। বইটিতে আফ্রিকা ও ভারতের ৪২টি

অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের আরবি ভাষার প্ল্যাটফর্মের সূচনা : একটি উত্তেজনাকর মাইলফলক

অ্যাকসেস এগ্রিকালচার আনন্দের সাথে ঘোষণা করছে যে, তারা আরবিভাষীদের জন্য আরবি ভাষার প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। এতে করে বহু আরবিভাষীর কাছে পৌঁছানো যাবে

অ্যাকসেস এগ্রিকালচার-এর নতুন ওয়েবসাইটে স্বাগত

কৃষিবিদ্যা এবং জৈবচাষাবাদের ওপর কৃষক প্রশিক্ষণ ভিডিওর বিশ্বের বৃহত্তম বহুভাষিক লাইবেরি অন্বেষণ করুন ব্রাসেলস, বেলজিয়াম — অ্যাকসেস এগ্রিকালচার তাদের

মিশরে অগ্রগামী কাজের জন্য অ্যাকসেস এগ্রিকালচার প্রশংসিত

সিজিআইআর, একটি বৈশ্বিক কৃষি-গবেষণা নেটওয়ার্ক, এর নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডক্টর ইসমাহানে ইলাউফি মিশরের প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে নারী ও তরুণ শ্রেণিসহ কৃষকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সাম্প্রতিক ভিডিও

আমাদের স্পনসরদের ধন্যবাদ